গ্যাস থেকে কি স্ট্রোক হয়?
স্ট্রোক মানে হলো আমাদের মাথায় রক্তের সমস্যা। যখন মাথার কোনো অংশে রক্ত যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় বা কোনো রক্তের নল ফেটে যায়, তখন স্ট্রোক হয়। এটা পেটের গ্যাসের মতো কিছু না, এটা হলো মাথার ভেতরের রক্তের নলের ঝামেলা। যাদের প্রেসার বেশি, ডায়াবেটিস আছে, রক্তে চর্বি বেশি, যারা ধোঁয়া খায়, মোটা আর যারা একদম নড়ে না বা যাদের হার্টের রোগ আছে, তাদের এই রোগ হওয়ার ভয় বেশি। এইগুলো আমাদের মাথার রক্তের নলগুলোকে খারাপ করে দেয় বা রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দেয়। তাই সুস্থ থাকতে হলে এইগুলোর দিকে খেয়াল রাখা দরকার।
গ্যাসের কারণে শরীরে কি হয়?
আমাদের পেটের ভেতরে সবসময় কিছু গ্যাস থাকে। এটা খাবার হজম হওয়ার একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু যখন এই গ্যাসের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়, তখন নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত গ্যাসের কারণে পেট ফুলে যেতে পারে, যা খুবই অস্বস্তিকর। এছাড়াও, পেটের মধ্যে চাপ অনুভব হতে পারে এবং মনে হতে পারে যেন পেটটা শক্ত হয়ে আছে। এই গ্যাসের চাপ অনেক সময় পেটের অন্য অংশেও ছড়াতে পারে, যার ফলে অস্বস্তি লাগে।
শুধু পেটেই নয়, গ্যাসের কারণে আমাদের হজমের অন্যান্য স্বাভাবিক কাজেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। খাবার ঠিকমতো হজম না হলে বা গ্যাস বেশি হলে বমি বমি ভাব হতে পারে। এমনকি, কারও কারও ক্ষেত্রে পেট কামড়ানোর মতো ব্যথাও অনুভব হতে পারে। তাই, শরীরে গ্যাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি, যাতে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যায়।
গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
গ্যাসের সাধারণ উপসর্গ
গ্যাসের সমস্যার কিছু চেনা লক্ষণ আছে, যা দেখলে সহজেই বোঝা যায় শরীরে গ্যাস জমেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পেট ফাঁপা। যখন পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমা হয়, তখন পেটটা অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে এবং টাইট মনে হয়। এটা অনেকটা বেলুনের মতো অনুভূতি দিতে পারে।
বুক জ্বালাও গ্যাসের একটি সাধারণ উপসর্গ। পাকস্থলীর অ্যাসিড যখন খাদ্যনালীতে উঠে আসে, তখন বুকে জ্বালা অনুভব হয়। গ্যাস এই অ্যাসিডের উপরে চাপ সৃষ্টি করে এটিকে আরও সহজে উপরে ঠেলে দিতে পারে, যার ফলে বুক জ্বালার সমস্যা বাড়ে। এছাড়াও, পেটে অস্বস্তি লাগা এবং চিনচিনে ব্যথা অনুভব করাও গ্যাসের লক্ষণ।
গ্যাসের কারণে বুকে ব্যথা
অনেক সময় গ্যাসের কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে। পেটের গ্যাস যখন উপরের দিকে ওঠে, তখন বুকের আশেপাশে চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপের কারণে বুকের মাঝখানে বা বাম পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা অনেকটা অস্বস্তিকর এবং ভীতিকর হতে পারে।
গ্যাসের কারণে হওয়া বুকে ব্যথা অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ব্যথার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়। কারণ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের সময়ও বুকে তীব্র ব্যথা হতে পারে। তবে গ্যাসের ব্যথা সাধারণত কিছুক্ষণ থাকে এবং নড়াচড়া করলে বা গ্যাস বের হলে কমে যায়। অন্যদিকে, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ব্যথা সাধারণত খুব তীব্র হয় এবং অন্যান্য লক্ষণও দেখা যায়। তাই বুকে ব্যথা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে সঠিক কারণ নির্ণয় করা যায় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করা যায়।
গ্যাস ও স্ট্রোকের সম্পর্ক
পেটে যে গ্যাস তৈরি হয়, তা কিন্তু সরাসরি স্ট্রোকের কারণ নয়। স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের ভেতরের রক্তনালীর একটি জটিল সমস্যা, যেখানে রক্ত ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না অথবা কোনো রক্তনালী ছিঁড়ে যায়। অন্যদিকে, গ্যাস হলো আমাদের হজম প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অংশ, যা মূলত পাকস্থলী ও অন্ত্রে তৈরি হয়। এই দুটি বিষয় শরীরের সম্পূর্ণ ভিন্ন অংশে ঘটে এবং এদের উৎপত্তির কারণও আলাদা। সুতরাং, পেটে গ্যাস জমা হলে কারো স্ট্রোক হওয়ার কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। এগুলো দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা।
তবে, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গ্যাসের কিছু উপসর্গ স্ট্রোকের লক্ষণের সাথে কিছুটা মিলে যেতে পারে, আর এখানেই বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, গ্যাসের কারণে বুকে ব্যথা অনুভব হতে পারে, যা অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ব্যথার মতো মনে হতে পারে। এই কারণে, বুকে হঠাৎ করে কোনো অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব হলে অনেকেই ভয় পেয়ে যান এবং মনে করতে পারেন যে এটি স্ট্রোকের লক্ষণ। কিন্তু আসলে গ্যাসের কারণেও এমনটা হতে পারে।
পেটে গ্যাসের জন্য সাধারণত বুকে জ্বালা বা অস্বস্তি লাগতে পারে, এবং মনে হতে পারে যেন বুকের মধ্যে চাপ ধরে আছে। স্ট্রোকের প্রাথমিক পর্যায়েও এমন কিছু অনুভূতি হতে পারে, তবে স্ট্রোকের ব্যথা সাধারণত অনেক তীব্র হয় এবং এর সাথে অন্যান্য লক্ষণও দেখা যায়, যেমন হাত-পা দুর্বল লাগা, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া অথবা মুখ বেঁকে যাওয়া। এই সামান্য মিল থাকার কারণে অনেক সময় পেটের গ্যাসকে স্ট্রোক ভেবে ভুল হতে পারে।
অন্যদিকে, এমনও হতে পারে যে স্ট্রোকের কিছু হালকা লক্ষণকে সাধারণ গ্যাসের সমস্যা ভেবে কেউ গুরুত্ব দিল না, যা পরবর্তীতে খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। তাই, যদি বুকে ব্যথা বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক শারীরিক অনুভূতি হয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। একজন ডাক্তার ভালোভাবে পরীক্ষা করে বুঝতে পারবেন আসল সমস্যাটি কী – গ্যাস নাকি স্ট্রোক – এবং সেই অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন। কোনো রকম সন্দেহ থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
ভুল ধারণার কারণ
গ্যাসের উপসর্গের সাদৃশ্য
- পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমা হলে তা বুকের দিকে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হয়। এই ব্যথা অনেক সময় তীক্ষ্ণ বা চাপা হতে পারে, যা হৃদরোগের ব্যথার অনুভূতির সাথে কিছুটা মিলে যায়।
- স্ট্রোকের প্রাথমিক পর্যায়েও বুকে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যদিও এটি গ্যাসের ব্যথার চেয়ে তীব্র এবং ভিন্ন ধরনের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে সাধারণ মানুষ এই সূক্ষ্ম পার্থক্য বুঝতে না পারার কারণে বিভ্রান্ত হতে পারে।
- গ্যাসের ব্যথা বুকের মাঝখানে বা বাম দিকে অনুভূত হলে, তা হার্ট অ্যাটাকের ব্যথার অবস্থানের সাথে মিলে যায়। যেহেতু হার্ট অ্যাটাক একটি জীবন-হুমকির কারণ, তাই বুকে এই ধরনের ব্যথা অনুভব হলেই অনেকে আতঙ্কিত হয়ে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে মনে করেন।
- এই সাদৃশ্যের কারণে মানুষ দ্রুত ভয় পেয়ে যায় এবং ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারে না, যার ফলে গ্যাসের ব্যথাকেও মারাত্মক রোগের লক্ষণ হিসেবে ধরে নেয়।
সচেতনতার অভাব
- অনেক সাধারণ মানুষ স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের সুনির্দিষ্ট লক্ষণগুলো সম্পর্কে পর্যাপ্তভাবে অবগত নন। ফলে, যখন কোনো শারীরিক অস্বস্তি হয়, তখন তারা সবচেয়ে খারাপ সম্ভাবনাটি ভেবে নেন।
- স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণগুলো, যেমন হঠাৎ করে শরীরের একপাশ দুর্বল হয়ে যাওয়া, কথা বলতে বা বুঝতে অসুবিধা হওয়া, মুখ বা চোখের পাতা বেঁকে যাওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে অনেকের স্পষ্ট জ্ঞান না থাকায় তারা বুকের ব্যথাই একমাত্র উদ্বেগের কারণ মনে করেন।
- যখন বুকে ব্যথার মতো একটি উপসর্গ দেখা দেয়, তখন অনেকেই অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো (যেমন মুখের অসাড়তা, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, ভারসাম্যহীনতা) বিবেচনায় নেন না এবং শুধুমাত্র ব্যথার ওপর ভিত্তি করে ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
- স্বাস্থ্য বিষয়ক সঠিক তথ্যের অভাবে অনেক সময় সাধারণ পেটের গ্যাসজনিত অস্বস্তিকেও মারাত্মক রোগের লক্ষণ হিসেবে ধরে নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যদি স্ট্রোক এবং গ্যাসের উপসর্গের মধ্যেকার পার্থক্য সম্পর্কে মানুষকে জানানো যায়, তবে এই ধরনের ভুল ধারণা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। সঠিক তথ্য মানুষকে শান্ত থাকতে এবং সঠিক সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে উৎসাহিত করবে।
কখন সতর্ক হবেন?
সাধারণ পেটে গ্যাসের সমস্যা তেমন ভয়ের কিছু না। তবে, যদি গ্যাসের অস্বস্তির সাথে অন্য কিছু লক্ষণও দেখা দেয়, তাহলে কিন্তু সাবধানে থাকতে হবে। যদি দেখেন হঠাৎ করে মুখটা একদিকে বেঁকে যাচ্ছে, অথবা হাত-পা দুর্বল বা অবশ লাগছে, কিংবা কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে, মানে কথা জড়িয়ে যাচ্ছে, তাহলে একদম দেরি না করে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যাওয়া খুব জরুরি। এই লক্ষণগুলো কিন্তু গ্যাসের সাধারণ সমস্যা নয়।
এই মুখ বেঁকে যাওয়া, হাত-পা অবশ হওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলো স্ট্রোকের ইঙ্গিত হতে পারে। স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কের কিছু অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বা কমে যায়, যার ফলে শরীরের এই ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। তাই গ্যাসের সাথে এই লক্ষণগুলো দেখলে একদম সময় নষ্ট করা উচিত না। দ্রুত ডাক্তারের কাছে গেলে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব এবং বড় বিপদ এড়ানো যেতে পারে।
সার কথা
পেটে গ্যাস হওয়া আর স্ট্রোক কিন্তু দুটো আলাদা ব্যাপার, গ্যাসের কারণে সরাসরি স্ট্রোক হয় না। স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের রক্তনালীর সমস্যা। তবে হ্যাঁ, গ্যাসের কিছু অস্বস্তি আর স্ট্রোকের কিছু শুরুর দিকের লক্ষণ একই রকম মনে হতে পারে, তাই ভয় লাগাটা স্বাভাবিক। আসল ব্যাপার হলো, স্ট্রোকের ঝুঁকি কাদের বেশি আর স্ট্রোক হলে কী কী লক্ষণ দেখা যায়, সেই বিষয়ে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে।
যদি কখনো স্ট্রোকের কোনো লক্ষণ চোখে পড়ে, যেমন মুখ বেঁকে যাওয়া, হাত বা পা দুর্বল লাগা অথবা কথা বলতে সমস্যা হওয়া, তাহলে একদম দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে স্ট্রোকের ক্ষতি অনেক কমানো যায়। তাই সচেতন থাকুন এবং স্ট্রোকের লক্ষণগুলো চিনতে শিখুন।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ নিউরোফিট