স্ট্রোক কী এবং কিভাবে হয়?
স্ট্রোক একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে ঘটে। যখন মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত পৌঁছাতে পারে না, তখন সেখানকার কোষগুলো অক্সিজেনের অভাবে দ্রুত মারা যেতে শুরু করে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতা, যেমন কথা বলা, নড়াচড়া করা বা মনে রাখার ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। স্ট্রোক মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমত, ইস্কেমিক স্ট্রোক, যা মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোতে কোনো কারণে বাধা সৃষ্টি হলে ঘটে। দ্বিতীয়ত, হেমোরেজিক স্ট্রোক, যা মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণের ফলে হয়। এই পোস্টে আমরা প্রধানত প্রেসার কত হলে স্ট্রোক হয় তা নিয়ে আলোচনা করবো।
উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের একটি প্রধান কারণ। তবে, শুধু একটি নির্দিষ্ট প্রেসার রিডিং দেখে বলা কঠিন যে কখন একজন ব্যক্তির স্ট্রোক হবে। কারণ একেকজনের শরীরের গঠন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর রক্তচাপের প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। সাধারণভাবে, যদি কারো রক্তচাপ দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকে, যেমন ১৪০/৯০ mmHg বা তার বেশি, তাহলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। তবে, হঠাৎ করে রক্তচাপ খুব বেশি বেড়ে গেলেও স্ট্রোক হতে পারে, এমনকি যাদের আগে উচ্চ রক্তচাপ ছিল না তাদেরও।
সুতরাং, প্রেসার কত হলে স্ট্রোক হয় – এর নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচ্চ রক্তচাপ জনিত স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও, ধূমপান পরিহার করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য জরুরি।
গ্যাস থেকে কি স্ট্রোক হয় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
রক্তচাপ ও স্ট্রোকের সম্পর্ক
উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কের রক্তনালী দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়
রক্তচাপ এবং স্ট্রোকের মধ্যে একটি সরাসরি ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। উচ্চ রক্তচাপ, যা হাইপারটেনশন নামেও পরিচিত, মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এই অতিরিক্ত চাপের কারণে রক্তনালীগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল ও স্থিতিস্থাপকতা হারাতে শুরু করে। অনেকটা পুরনো হয়ে যাওয়া টায়ারের মতো, যা অতিরিক্ত বাতাস দিলে ফেটে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে, তেমনি উচ্চ রক্তচাপ মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোকে দুর্বল করে তোলে।
দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ বজায় থাকলে মস্তিষ্কের রক্তনালীর ভেতরের দেয়াল পুরু হয়ে যেতে পারে। এই পুরুত্ব রক্তনালীর ভেতরের স্থানকে সংকুচিত করে ফেলে, যা মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয়। এছাড়া, দুর্বল হয়ে যাওয়া রক্তনালীতে চর্বি বা অন্যান্য পদার্থ জমাট বেঁধে রক্তপ্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে, যা ইস্কেমিক স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ।
এই ক্ষতি রক্তনালী ব্লক বা ফাটার ঝুঁকি বাড়ায়, ফলে স্ট্রোক হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালী ফাটার ঝুঁকিও বাড়ায়, যা হেমোরেজিক স্ট্রোকের কারণ। দুর্বল হয়ে যাওয়া রক্তনালীগুলো অতিরিক্ত চাপের কারণে সহজেই ছিঁড়ে যেতে পারে এবং মস্তিষ্কের ভেতরে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। এই রক্তক্ষরণ মস্তিষ্কের কোষগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয় এবং মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করে।
সুতরাং, প্রেসার কত হলে স্ট্রোক হয় – এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেওয়া কঠিন। তবে, সাধারণভাবে বলা যায়, যাদের রক্তচাপ দীর্ঘদিন ধরে ১৪০/৯০ mmHg বা তার বেশি থাকে, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে, রক্তচাপ হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলেও স্ট্রোক হতে পারে, এমনকি যাদের আগে উচ্চ রক্তচাপ ছিল না তাদেরও। তাই, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত জরুরি।
প্যারালাইসিস রোগীর হাত-পায়ে শক্তি ফিরে পাবার জন্য বিশেষ ফিজিওথেরাপি ব্যায়াম জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।
কত প্রেসার হলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে? প্রেসার কত হলে স্ট্রোক হয়?
সাধারণত, একজন সুস্থ মানুষের রক্তচাপ ১২০/৮০ mmHg বা তার নিচে থাকা উচিত। এই রিডিং দুটি সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা হয় – প্রথমটি সিস্টোলিক চাপ, যা হৃৎপিণ্ড সংকোচনের সময় ধমনীর ভেতরের চাপ নির্দেশ করে। দ্বিতীয়টি হলো ডায়াস্টোলিক চাপ, যা হৃৎপিণ্ডের বিশ্রাম নেওয়ার সময় ধমনীর ভেতরের চাপ দেখায়। এই স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
যখন কোনো ব্যক্তির রক্তচাপ নিয়মিতভাবে ১৪০/৯০ mmHg বা তার বেশি হয়, তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উচ্চ রক্তচাপকে অনেক সময় ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে এর তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে, এই উচ্চ চাপ ধীরে ধীরে রক্তনালীগুলোর ভেতরের দেয়ালকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে। এর ফলে রক্তনালীগুলো দুর্বল হয়ে যায় এবং রক্ত জমাট বাঁধার বা ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, যা শেষ পর্যন্ত স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
যদি রক্তচাপের মাত্রা ১৪০/৯০ mmHg-এর বেশি ছাড়িয়ে যায়, তবে স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। বিশেষ করে, যদি এই উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে নিয়ন্ত্রণে না রাখা হয়, তাহলে মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোর স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে (ইস্কেমিক স্ট্রোক) অথবা রক্তনালী ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে (হেমোরেজিক স্ট্রোক)। তাই, নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা এবং উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি।
স্ট্রোকের কারণে প্যারালাইসিস কিভাবে হয় এই পোস্টের মাধ্যমে জানুন।
উচ্চ রক্তচাপ কতটা ক্ষতিকর?
উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত, যা ধীরে ধীরে আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষতি করে। এটি রক্তনালী এবং মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম টিস্যুগুলির উপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে রক্তনালীগুলো দুর্বল ও স্থিতিস্থাপকতা হারাতে শুরু করে। দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালীগুলোকে শক্ত ও সরু করে ফেলে, যা বিভিন্ন অঙ্গে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এই কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে, যা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
উচ্চ রক্তচাপের কারণে শুধু স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে না, এটি হৃদরোগের আক্রমণ (হার্ট অ্যাটাক), কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা এবং মস্তিষ্কের অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টিরও কারণ হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালীগুলোতে চর্বি জমাট বেঁধে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে, যা ইস্কেমিক স্ট্রোকের দিকে ধাবিত করে। অন্যদিকে, দুর্বল রক্তনালী অতিরিক্ত চাপের কারণে ফেটে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে, যা হেমোরেজিক স্ট্রোকের কারণ। তাই, উচ্চ রক্তচাপ শরীরের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের জন্যই একটি বড় হুমকি।
উদ্বেগের বিষয় হলো, উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায়শই কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না। অনেকেই বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যায় ভুগতে থাকেন এবং যখন জটিলতা মারাত্মক আকার ধারণ করে, তখন বিষয়টি জানতে পারেন। এই কারণে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং রক্তচাপ পরিমাপ করা অত্যন্ত জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমে স্ট্রোক ও অন্যান্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
ঝুঁকি কমানোর উপায়
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রথমত, নিয়মিতভাবে নিজের রক্তচাপ পরিমাপ করা এবং যদি উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের কোনো লক্ষণ না থাকায় অনেকেই ওষুধ খেতে অনীহা প্রকাশ করেন, তবে মনে রাখতে হবে যে নিয়মিত ওষুধ সেবন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রধান উপায় এবং এটি স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সহায়ক। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করা বা ওষুধ বন্ধ করা উচিত নয়।
দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের তালিকায় প্রচুর ফল, সবজি এবং শস্য অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করা উচিত, কারণ লবণ রক্তচাপ বাড়াতে পারে। নিয়মিতভাবে হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করাও শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য মাঝারি ধরনের ব্যায়াম, যেমন দ্রুত হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানো, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
তৃতীয়ত, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ধূমপান রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ায়, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণে বৃদ্ধি করে। একইভাবে, অতিরিক্ত মদ্যপানও রক্তচাপ বাড়াতে পারে এবং স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। তাই, সুস্থ জীবন যাপনের জন্য ধূমপান ও মদ্যপান সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা উচিত।
চতুর্থত, মানসিক চাপ কমানো এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করাও স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য জরুরি। অতিরিক্ত মানসিক চাপ রক্তচাপ বাড়াতে পারে। যোগা, মেডিটেশন বা শখের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যায়। পাশাপাশি, প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো শরীরের কার্যকারিতা বজায় রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। একটি সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ধূমপানের কারণে স্ট্রোক হয় এই পোস্টের মাধ্যমে জেনে নিন।
স্ট্রোকের সতর্কতা লক্ষণ
স্ট্রোকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা লক্ষণ রয়েছে যা আমাদের আগে থেকেই সচেতন হতে সাহায্য করে। হঠাৎ করে মুখ, হাত বা পায়ের কোনো অংশ অসাড় বা দুর্বল হয়ে পড়লে দ্রুত সতর্ক হওয়া উচিত। বিশেষ করে যদি শরীরের একপাশে এই দুর্বলতা বা অসাড়তা অনুভূত হয়, তবে তা স্ট্রোকের একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কথা বলা বা বুঝতে অসুবিধা হওয়াও স্ট্রোকের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। যদি হঠাৎ করে কথা জড়িয়ে যায়, অথবা অন্য কারো কথা বুঝতে সমস্যা হয়, এমনকি সাধারণ বাক্যও বুঝতে অসুবিধা হয়, তবে এটি মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে কোনো সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত সহায়তা চাওয়া উচিত।
এছাড়াও, হঠাৎ করে চোখে ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টি संबंधी কোনো সমস্যা দেখা দিলে, যেমন একটি জিনিস দুটি দেখা বা হঠাৎ করে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, তা স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে। ভারসাম্য হারানো বা হঠাৎ করে মাথা ঘোরা এবং হাঁটতে অসুবিধা হওয়াও স্ট্রোকের পূর্বাভাস দিতে পারে। এসকল লক্ষণ দেখা গেলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত কেন্দ্রে যাওয়া উচিত। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে স্ট্রোকের ক্ষতিকর প্রভাব কমানো সম্ভব।
উপসংহার
উপসংহারে বলা যায়, রক্তচাপের মাত্রা যখন ১৪০/৯০ mmHg বা তার বেশি হয়, তখন স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। তবে, শুধু একটি নির্দিষ্ট রিডিং নয়, বরং দীর্ঘকাল ধরে উচ্চ রক্তচাপ বজায় থাকলে মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়তে থাকে। তাই, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং একে স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে কেবল স্ট্রোক নয়, হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা এবং চোখের জটিলতার মতো আরও অনেক বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। একটি সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ করা, যেমন স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা এবং মানসিক চাপ কমানোর মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। মনে রাখতে হবে, প্রতিরোধ সবসময় চিকিৎসার চেয়ে ভালো।
তাই, নিজের এবং পরিবারের সকল সদস্যের রক্তচাপ নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা উচিত। যদি কারো উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা নেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা অপরিহার্য। সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা স্ট্রোকের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে নিজেদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের রক্ষা করতে পারি।
যেকোনো পরামর্শ পেতে – 01760-636324 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ নিউরোফিট
সাধারণ জিজ্ঞাসা
১। প্রশ্নঃ প্রেসার কত হলে স্বাভাবিক?
উত্তরঃ প্রেসার কত হলে স্বাভাবিক, তা নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে, তবে সাধারণভাবে ১২০/৮০ mmHg এর নিচের রিডিংকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। এই রিডিং দুটি সংখ্যা দ্বারা গঠিত – প্রথমটি সিস্টোলিক চাপ (যখন হৃৎপিণ্ড রক্ত পাম্প করে) এবং দ্বিতীয়টি ডায়াস্টোলিক চাপ (যখন হৃৎপিণ্ড বিশ্রাম নেয়)। তবে, বয়স এবং শারীরিক অবস্থার ভেদে সামান্য পার্থক্য দেখা যেতে পারে, তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিজের স্বাভাবিক প্রেসারের মাত্রা জেনে নেওয়া সবচেয়ে ভালো।
২। প্রশ্নঃ প্রেসার কত থাকলে ভালো?
উত্তরঃ সাধারণভাবে, রক্তচাপ ১২০/৮০ mmHg-এর নিচে থাকলে তাকে ভালো বা স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। এই মাত্রায় থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যার ঝুঁকি কম থাকে। তবে, বয়স এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে এই মাত্রা কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো প্রেসারের মাত্রা কত হওয়া উচিত, তা জানার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৩। প্রশ্নঃ প্রেসার হলে কি করা উচিত?
উত্তরঃ যদি আপনার প্রেসার বেশি বা কম হয়, তবে সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। ডাক্তার আপনার প্রেসারের কারণ নির্ণয় করবেন এবং সেই অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের পরামর্শ দেবেন। নিজে থেকে কোনো ওষুধ খাওয়া বা বন্ধ করা উচিত নয়। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।