ধূমপানের কারণে স্ট্রোক হয়

ধূমপানের কারণে স্ট্রোক হয়? এর প্রধান কারণগুলো কি কি?

ভূমিকা

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু ধূমপানের কারণে যে স্ট্রোক হতে পারে, তা হয়তো অনেকের কাছেই অজানা। স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের রক্তনালীতে কোনো বাধা সৃষ্টি হলে বা রক্তনালী ছিঁড়ে গেলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো দ্রুত মারা যেতে শুরু করে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা লোপ পায়। স্ট্রোক একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং এর ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই পোস্টের মাধ্যমে ধূমপানের কারণে স্ট্রোক হয় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

ধূমপান স্ট্রোকের একটি প্রধান কারণ। সিগারেটের ধোঁয়ায় নিকোটিনসহ অসংখ্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এই পদার্থগুলো রক্তনালীগুলোকে সরু ও শক্ত করে তোলে, যা আর্টেরিওস্কেলেরোসিস নামে পরিচিত। রক্তনালী সরু হয়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে যায় এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও, ধূমপান রক্তকে ঘন করে তোলে, ফলে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই রক্ত জমাট বাঁধা অংশ মস্তিষ্কের রক্তনালীতে আটকে গিয়ে রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে, যা ইস্কেমিক স্ট্রোকের একটি প্রধান কারণ।

শুধু তাই নয়, ধূমপান রক্তচাপও বাড়িয়ে তোলে। উচ্চ রক্তচাপ মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা রক্তনালী ছিঁড়ে হেমোরেজিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। যারা নিয়মিত ধূমপান করেন, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অধূমপায়ীদের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি, পরোক্ষ ধূমপানও (অন্যের ধোঁয়া শ্বাসের সাথে নেওয়া) স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই, স্ট্রোকের মতো ভয়াবহ রোগ থেকে বাঁচতে ধূমপান ত্যাগ করা এবং ধূমপান থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত জরুরি।

ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক কেন হয় জানুন

ধূমপান ও স্ট্রোকের সম্পর্ক

ধূমপান ও স্ট্রোকের সম্পর্ক

ধূমপান এবং স্ট্রোকের মধ্যে একটি সরাসরি ও শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। যারা ধূমপান করেন, তাদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা অধূমপায়ীদের তুলনায় অনেক বেশি। এর প্রধান কারণ হলো সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থগুলো রক্তনালী ও রক্তের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এই প্রভাবগুলো ধীরে ধীরে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান স্ট্রোকের একটি অন্যতম প্রধান প্রতিরোধযোগ্য কারণ। ধূমপান ত্যাগ করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে। এমনকি যারা দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করেছেন, তারাও ধূমপান ছেড়ে দিলে কয়েক বছরের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি অধূমপায়ীদের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারেন। তাই, স্ট্রোকের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে ধূমপান পরিহার করা অত্যন্ত জরুরি।

ধূমপান কীভাবে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়

ধূমপান কীভাবে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়?

সিগারেটের ধোঁয়ায় নিকোটিনসহ কয়েক হাজার ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এই পদার্থগুলো আমাদের রক্তনালীগুলোর ভেতরের স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালীর গায়ে চর্বি ও অন্যান্য পদার্থ জমা হতে শুরু করে, যা রক্তনালীকে ধীরে ধীরে সরু করে ফেলে। এই অবস্থাকে আর্টেরিওস্কেলেরোসিস বলা হয়। রক্তনালী সরু হয়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে যায় এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

এছাড়াও, ধূমপান রক্তকে আরও ঘন করে তোলে এবং রক্তে প্লেটলেটের আঠালোতা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেড়ে যায়। যদি এই জমাট বাঁধা রক্ত মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালীতে গিয়ে আটকে যায়, তবে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে ইস্কেমিক স্ট্রোক হতে পারে। ধূমপান উচ্চ রক্তচাপের কারণও হতে পারে, যা মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিঁড়ে গিয়ে হেমোরেজিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানুন এই পোস্ট থেকে।

ধূমপানের কারণে শরীরে ক্ষতিকর পরিবর্তন

ধূমপান আমাদের শরীরে তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদী অনেক ক্ষতিকর পরিবর্তন ঘটায়। নিকোটিন রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। কার্বন মনোক্সাইড রক্তের অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যার ফলে মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয়।

দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করলে রক্তনালীগুলো শক্ত ও অস্থিতিস্থাপক হয়ে পড়ে। ধোঁয়ায় থাকা টার নামক পদার্থ ফুসফুসের কার্যকারিতা কমিয়ে শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে। এছাড়াও, ধূমপান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং ক্যান্সারসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। স্ট্রোকের ঝুঁকি তো এর একটি ভয়াবহ পরিণতি।

ধূমপানের ফলে স্ট্রোকের কারণসমূহ

ধূমপানের ফলে স্ট্রোকের কারণসমূহ

ধূমপান স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় মূলত চারটি প্রধান কারণে। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা বিষাক্ত পদার্থগুলো সরাসরি আমাদের রক্তনালী ও রক্তের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে, যা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। নিচে এই কারণগুলো সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হলো:

১. রক্তনালী সংকুচিত হওয়াঃ ধূমপানের ফলে রক্তনালীগুলো ধীরে ধীরে সরু হয়ে যায়। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা নিকোটিন এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ রক্তনালীর ভেতরের স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ক্ষতিগ্রস্ত অংশে চর্বি ও অন্যান্য উপাদান জমা হতে শুরু করে, ফলে রক্তনালীর পথ ছোট হয়ে আসে। সরু রক্তনালী দিয়ে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পৌঁছাতে পারে না, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

২. রক্তচাপ বৃদ্ধিঃ ধূমপান করলে রক্তচাপ তাৎক্ষণিকভাবে বেড়ে যায়। নিকোটিন হৃদস্পন্দন বাড়ায় এবং রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে, যার ফলে রক্তের চাপ বেড়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে ধূমপান করলে উচ্চ রক্তচাপ স্থায়ী হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা রক্তনালী ছিঁড়ে গিয়ে হেমোরেজিক স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।

৩. রক্তে জমাট বাঁধার প্রবণতাঃ ধূমপান রক্তকে আরও ঘন করে তোলে এবং রক্তে থাকা প্লেটলেট নামক কোষগুলোকে আঠালো করে ফেলে। এর ফলে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। যদি এই জমাট বাঁধা রক্ত মস্তিষ্কের কোনো ছোট বা বড় রক্তনালীতে গিয়ে আটকে যায়, তবে মস্তিষ্কের সেই অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং ইস্কেমিক স্ট্রোক হতে পারে।

৪. মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধাঃ উপরের তিনটি কারণ সম্মিলিতভাবে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা – এই সবকিছুই মস্তিষ্কের কোষগুলোতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছাতে দেয় না। দীর্ঘ সময় ধরে এই অবস্থা চলতে থাকলে মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্ট্রোকের মতো মারাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে।

গ্যাস থেকে কি স্ট্রোক হয় জানুন এই পোস্ট থেকে

স্ট্রোকের ধরন ও ধূমপানের প্রভাব

স্ট্রোকের ধরন ও ধূমপানের প্রভাব

ইস্কেমিক স্ট্রোক ও ধূমপানের প্রভাব

ইস্কেমিক স্ট্রোক ঘটে যখন মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালী রক্ত জমাট বাঁধা বা অন্য কোনো কারণে সরু হয়ে যায় অথবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ধূমপান এই ধরনের স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থগুলো রক্তনালীগুলোর ভেতরের স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সেগুলোকে ধীরে ধীরে সরু করে ফেলে। একইসাথে, ধূমপান রক্তকে ঘন করে তোলে এবং রক্তে জমাট বাঁধার প্রবণতা বৃদ্ধি করে। এই জমাট বাঁধা রক্ত মস্তিষ্কের সরু রক্তনালীতে আটকে গিয়ে রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে, যার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাবে মারা যায় এবং ইস্কেমিক স্ট্রোক হয়।

হেমোরেজিক স্ট্রোক ও ধূমপানের প্রভাব

হেমোরেজিক স্ট্রোক ঘটে যখন মস্তিষ্কের কোনো দুর্বল রক্তনালী ফেটে যায় এবং মস্তিষ্কের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়। ধূমপান এই ধরনের স্ট্রোকের ঝুঁকিও বৃদ্ধি করে। ধূমপান উচ্চ রক্তচাপের একটি প্রধান কারণ, যা মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং সেগুলোকে দুর্বল করে ফেলে। দুর্বল রক্তনালীগুলো সহজেই ফেটে যেতে পারে, যার ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় এবং হেমোরেজিক স্ট্রোক হয়। এছাড়াও, ধূমপানের কারণে রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়, যা তাদের আরও ভঙ্গুর করে তোলে এবং রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায়।

পরোক্ষ ধূমপান (প্যাসিভ স্মোকিং) ও ঝুঁকি

ধূমপান শুধু যে ধূমপান করেন তার জন্যই ক্ষতিকর তা নয়, এর ধোঁয়া আশেপাশে থাকা মানুষজনের স্বাস্থ্যের উপরও খারাপ প্রভাব ফেলে। এই ধোঁয়াকে পরোক্ষ ধূমপান বা প্যাসিভ স্মোকিং বলা হয়। যারা নিজেরা ধূমপান না করেও ধূমপানকারীর আশেপাশে থাকেন, তারাও সিগারেটের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করেন। এর ফলে তাদেরও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

গবেষণায় দেখা গেছে, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়া ব্যক্তি, বিশেষ করে পরিবারের সদস্য ও কর্মক্ষেত্রে আশেপাশে থাকা মানুষেরা, অধূমপায়ীদের তুলনায় বেশি মাত্রায় স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা নিকোটিন ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ তাদের রক্তনালীগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, রক্তচাপ বাড়াতে পারে এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বৃদ্ধি করতে পারে। তাই, নিজের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি পরিবারের সদস্য ও আশেপাশের মানুষের সুরক্ষার জন্য ধূমপান পরিহার করা এবং ধূমপানমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

প্যারালাইসিস রোগীর হাত-পায়ে শক্তি ফিরে পাবার জন্য বিশেষ ফিজিওথেরাপি ব্যায়াম জেনে নিন

ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা

ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা

ধূমপান ত্যাগ করা আপনার শরীরের জন্য তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদী অনেক উপকার বয়ে আনে। ধূমপান ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনার হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। কয়েক ঘণ্টা পর রক্তে কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা কমে যায় এবং অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ে। কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে আপনার কাশি এবং শ্বাসকষ্ট কমে আসে, ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত হতে শুরু করে এবং স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি ফিরে আসে। দীর্ঘমেয়াদে, ধূমপান ত্যাগ করলে ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায় এবং আপনার জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়।

ঝুঁকি কমানোর উপায়

ধূমপান ছাড়ার মাধ্যমে আপনি স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারেন। ধূমপান ত্যাগ করার পর প্রথম কয়েক বছরেই স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে শুরু করে এবং কয়েক বছর পর তা অধূমপায়ীদের কাছাকাছি চলে আসে। ধূমপান ত্যাগ করার পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোর গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলাও জরুরি।

স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা

ধূমপান ছাড়ার পর আপনার শরীর ধীরে ধীরে নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে শুরু করে। ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালীগুলো ধীরে ধীরে স্থিতিস্থাপকতা ফিরে পায় এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা কমে আসে। ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ হয়। যদিও দীর্ঘদিনের ক্ষতি পুরোপুরি সেরে নাও উঠতে পারে, তবে ধূমপান ত্যাগ করলে আপনার স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হবে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। তাই, যেকোনো বয়সেই ধূমপান ত্যাগ করা বুদ্ধিমানের কাজ।

প্রতিরোধ ও সচেতনতা

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে ধূমপান প্রতিরোধ এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। ধূমপান শুরু করা থেকে বিরত থাকা এবং যারা ইতিমধ্যে ধূমপান করছেন তাদের ধূমপান ত্যাগে উৎসাহিত করাই প্রতিরোধের মূল লক্ষ্য। এর জন্য ব্যাপক জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন, যেখানে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব এবং স্ট্রোকের ঝুঁকির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে। স্কুল, কলেজ এবং গণমাধ্যমে ধূমপানবিরোধী প্রচারণার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে ধূমপানের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানানো উচিত।

ধূমপানবিরোধী কার্যক্রম

সরকার এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা ধূমপানবিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে সুস্পষ্ট স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা এবং ভীতিকর ছবি যুক্ত করা, सार्वजनिक স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা, এবং সিগারেটের উপর উচ্চ কর আরোপ করার মতো পদক্ষেপ ধূমপানের প্রবণতা কমাতে সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও, ধূমপান ত্যাগ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য কাউন্সেলিং এবং সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করা উচিত, যেখানে তারা প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও চিকিৎসা সহায়তা পেতে পারে।

ব্যক্তিগত ও সামাজিক করণীয়

ধূমপান প্রতিরোধে ব্যক্তিগত ও সামাজিক ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিজে ধূমপান না করা এবং অন্যকে ধূমপান করতে নিরুৎসাহিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের মধ্যে কেউ ধূমপান করলে তাকে এর ক্ষতিকর দিকগুলো বুঝিয়ে ধূমপান ত্যাগ করতে উৎসাহিত করা উচিত। ধূমপানমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য নিজেদের বাড়িতে এবং কর্মক্ষেত্রে ধূমপান নিষিদ্ধ করা উচিত। সামাজিক অনুষ্ঠানে ধূমপানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং ধূমপানবিরোধী আলোচনায় অংশগ্রহণ করা সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই একটি ধূমপানমুক্ত এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিহীন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

স্ট্রোকের কারণে প্যারালাইসিস কিভাবে হয় এই পোস্টের মাধ্যমে জানুন।

উপসংহার

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ, আর এটা স্ট্রোকের একটা বড় কারণ। সিগারেটের ধোঁয়ায় অনেক বিষ থাকে যা আমাদের রক্তের নলগুলোকে চিকন করে ফেলে, প্রেসার বাড়িয়ে দেয় আর রক্তকে জমাট বাঁধিয়ে দিতে পারে। এই কারণে আমাদের মাথায় রক্ত ঠিক মতো পৌঁছাতে পারে না, আর তখনই স্ট্রোক হয়। তাই সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান একদম ছেড়ে দেওয়া উচিত।

শুধু নিজে না, আশেপাশের যারা ধূমপান করে তাদেরকেও এর খারাপ দিকগুলো বোঝানো দরকার। সবাই যদি সচেতন হয় আর ধূমপান না করে, তাহলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে ধূমপানমুক্ত জীবন গড়ি আর স্ট্রোকের মতো ভয়াবহ রোগ থেকে নিজেদের বাঁচাই।

 

যেকোনো স্ট্রোক সংক্রান্ত পরামর্শ পেতে – 01760-636324 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ নিউরোফিট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *