স্ট্রোক একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং এর জন্য দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কের রক্তনালীতে বাধা সৃষ্টি হয় বা রক্তক্ষরণ হয়, যার ফলে মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি হতে শুরু করে। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা গেলে মস্তিষ্কের ক্ষতি কমিয়ে আনা এবং রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব। স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা গেলে এক মুহূর্তও দেরি না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। আমাদের এই পোস্টে স্ট্রোক রোগীর জরুরি চিকিৎসা কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
হাসপাতালে নেওয়ার আগে রোগীকে শান্ত রাখতে হবে এবং তাকে চিত করে শুইয়ে দিতে হবে। গায়ের জামাকাপড় ঢিলেঢালা করে দিন যাতে শ্বাস নিতে সুবিধা হয়। রোগীর বমি বা লালা আটকে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, তাই মুখ পরিষ্কার রাখুন। স্ট্রোকের সময় রোগীকে কোনো খাবার বা পানীয় দেওয়া উচিত না, কারণ গিলতে অসুবিধা হতে পারে। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করুন অথবা দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করুন।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর ডাক্তাররা দ্রুত রোগ নির্ণয়ের জন্য সিটি স্ক্যান বা এমআরআই-এর মতো পরীক্ষা করবেন। স্ট্রোকের ধরন (ইস্কেমিক বা হেমোরেজিক) অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা হবে। ইস্কেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে রক্ত জমাট দ্রবীভূত করার ওষুধ (থ্রম্বোলাইটিক) দেওয়া হতে পারে, যা স্ট্রোক হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দিলে ভালো কাজ করে। হেমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে রক্তপাত বন্ধ করা এবং মস্তিষ্কের চাপ কমানোর চিকিৎসা করা হয়। দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা শুরু করলে স্ট্রোক রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে আপনার কি কি করণীয় তা এই পোস্ট থেকে জানুন।
দ্রুত রোগী শনাক্ত ও হাসপাতালে নেওয়া
অবশ্যই, স্ট্রোক রোগীর জরুরি চিকিৎসার প্রতিটি পয়েন্ট দুটি অনুচ্ছেদে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হলো:
দ্রুত রোগী শনাক্ত ও হাসপাতালে নেওয়া
স্ট্রোকের লক্ষণগুলো চিনে রাখা এবং দ্রুত রোগীকে শনাক্ত করা প্রাথমিক চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। হঠাৎ করে মুখ বেঁকে যাওয়া, এক হাত বা পা দুর্বল বা অবশ লাগা, কথা বলতে বা বুঝতে অসুবিধা হওয়া, ঝাপসা দেখা অথবা চোখে অন্ধকার লাগা, এবং তীব্র মাথাব্যথা – এগুলো স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ। এই লক্ষণগুলো দেখা গেলে কোনোভাবেই সময় নষ্ট করা উচিত না। মনে রাখবেন, স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, কারণ মস্তিষ্কের কোষ প্রতি মিনিটে লক্ষ লক্ষ হারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।
লক্ষণগুলো শনাক্ত করার সাথে সাথেই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করা অথবা অন্য কোনো দ্রুততম উপায়ে রোগীকে নিকটস্থ স্ট্রোক কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া উচিত। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর ডাক্তাররা দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে রোগীর মস্তিষ্কের ক্ষতি কমানো এবং পক্ষাঘাত বা অন্যান্য জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা মাত্রই দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে
স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হঠাৎ করেই দেখা দিতে পারে এবং এগুলো তীব্র হতেও পারে আবার হালকাভাবেও অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় রোগী বা তার আশেপাশে থাকা লোকজন স্ট্রোকের লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দেন না বা অন্য কোনো সাধারণ অসুস্থতা মনে করে ভুল করেন। এই ভুল করার কারণে মূল্যবান সময় নষ্ট হয় এবং রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই স্ট্রোকের কোনো একটি লক্ষণ দেখা গেলেও সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।
দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার কারণ হলো, স্ট্রোকের চিকিৎসার কার্যকারিতা সময়ের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে ইস্কেমিক স্ট্রোকের (মস্তিষ্কের রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়া) ক্ষেত্রে রক্ত জমাট দ্রবীভূত করার ওষুধ (থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি) স্ট্রোক হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দিলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে এই চিকিৎসার কার্যকারিতা কমতে থাকে এবং মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতির ঝুঁকি বাড়তে থাকে। তাই স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা মাত্রই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জীবন রক্ষাকারী হতে পারে।
সময়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে, কারণ দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জরুরি
স্ট্রোকের চিকিৎসায় সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন, “টাইম ইজ ব্রেইন” অর্থাৎ সময়ই মস্তিষ্ক। এর অর্থ হলো স্ট্রোক হওয়ার পর যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, তত বেশি মস্তিষ্কের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব। মস্তিষ্কের প্রতিটি অংশ শরীরের নির্দিষ্ট কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সেই অংশের কোষগুলো দ্রুত মারা যেতে শুরু করে, যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা লোপ পায়।
দ্রুত চিকিৎসা শুরু করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ পুনরায় চালু করার চেষ্টা করা হয় (ইস্কেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে) অথবা রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করা হয় (হেমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে)। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা গেলে পক্ষাঘাত, বাকশক্তি হারানো, স্মৃতিভ্রম বা অন্যান্য স্থায়ী disability-র ঝুঁকি কমানো যায় এবং রোগীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই স্ট্রোকের লক্ষণগুলোকে অবহেলা না করে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানো এবং চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি।
তীব্র গরমে হিট স্ট্রোকের লক্ষণ জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
রোগীকে নিরাপদ ও আরামদায়ক অবস্থানে রাখা
রোগীকে নিরাপদ ও আরামদায়ক অবস্থানে রাখা
স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা গেলে রোগীকে দ্রুত এবং সাবধানে একটি সমতল ও নিরাপদ স্থানে শুইয়ে দিতে হবে। হঠাৎ করে স্ট্রোক হলে রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পড়ে গিয়ে আঘাত লাগতে পারে। তাই রোগীকে এমনভাবে শুইয়ে দিন যাতে তার নড়াচড়া করতে অসুবিধা না হয় এবং কোনো প্রকার ঝাঁকুনি বা অস্বস্তি না হয়। মাথার নীচে একটি পাতলা বালিশ দিতে পারেন, তবে খেয়াল রাখবেন যাতে শ্বাস নিতে কোনো অসুবিধা না হয়।
রোগীকে শুইয়ে দেওয়ার পর তার গলার বোতাম, টাই বা শরীরে থাকা অন্য কোনো আঁটসাঁট পোশাক আলগা করে দিন। এতে রোগীর শ্বাস নিতে সুবিধা হবে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। যদি রোগীর মুখে কোনো খাবার, পানীয় বা অন্য কোনো বস্তু থাকে, তাহলে তা সাবধানে পরিষ্কার করে দিন। স্ট্রোকের সময় রোগীর বমি হতে পারে এবং তা শ্বাসনালীতে আটকে গিয়ে বিপদ ঘটাতে পারে।
খাবার, পানি বা ওষুধ খাওয়ানো যাবে না
স্ট্রোকের সময় রোগীর গিলতে অসুবিধা হতে পারে। তাই এই সময় কোনো খাবার, পানি বা ওষুধ খাওয়ানো উচিত না। যদি খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে তা শ্বাসনালীতে ঢুকে যাওয়ার (অ্যাসপিরেশন) ঝুঁকি থাকে, যা নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
হাসপাতালে নেওয়ার আগে বা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রোগীকে কোনো প্রকার ওষুধ দেওয়া উচিত না। স্ট্রোকের ধরন এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ডাক্তারই সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণ করবেন। তাই রোগীকে শান্ত রাখুন এবং দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন, কিন্তু এই সময় কোনো খাবার, পানীয় বা ওষুধ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর জরুরি চিকিৎসা
দ্রুত রোগী শনাক্ত ও হাসপাতালে নেওয়া: স্ট্রোকের লক্ষণগুলো যেমন হঠাৎ মুখ বেঁকে যাওয়া, হাত বা পা দুর্বল লাগা, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া অথবা ঝাপসা দেখা দেওয়া মাত্রই দেরি না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। সময়ের গুরুত্ব এখানে অপরিসীম, কারণ মস্তিষ্কের কোষগুলো রক্ত সরবরাহ বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া গেলে ডাক্তাররা দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন, যা মস্তিষ্কের ক্ষতি কমিয়ে আনা এবং রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য অত্যন্ত জরুরি।
স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে সাবধানে একটি সমতল ও নিরাপদ স্থানে শুইয়ে দিতে হবে। গলার বোতাম বা আঁটসাঁট পোশাক আলগা করে দিন এবং মুখের ভেতর কিছু থাকলে তা পরিষ্কার করুন। স্ট্রোকের সময় রোগীর গিলতে অসুবিধা হতে পারে, তাই তাকে কোনো খাবার, পানি বা ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। রোগীকে শান্ত রাখা এবং তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করাই এই মুহূর্তে প্রধান কাজ।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর ডাক্তাররা দ্রুত রোগ নির্ণয়ের জন্য সিটি স্ক্যান বা এমআরআই-এর মতো প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করবেন। স্ট্রোকের ধরন (ইস্কেমিক বা হেমোরেজিক) শনাক্ত হওয়ার পর দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা হয়। ইস্কেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে রক্ত জমাট দ্রবীভূত করার ওষুধ এবং হেমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ ও মস্তিষ্কের চাপ কমানোর চিকিৎসা করা হয়। এছাড়াও, রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন, স্যালাইন এবং অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী সাপোর্ট দেওয়া হয়। দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা শুরু করাই স্ট্রোক রোগীর সুস্থতার মূল চাবিকাঠি।
জীবনরক্ষাকারী ব্যবস্থা
স্ট্রোকের পরে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর তার শ্বাস-প্রশ্বাস, রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলোর মাধ্যমে রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং কোনো অবনতি ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। প্রয়োজনে রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়, যাতে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল থাকে।
অজ্ঞান বা আংশিক অচেতন রোগীদের ক্ষেত্রে তাদের একদিকে কাত করে শুইয়ে রাখা হয়, যাকে রিকভারি পজিশনও বলা হয়। এর ফলে তাদের মুখ থেকে লালা বা বমি সহজে বেরিয়ে যেতে পারে এবং শ্বাসনালীতে আটকে যাওয়ার ঝুঁকি কমে। দীর্ঘ সময় ধরে অজ্ঞান থাকলে বা গিলতে অসুবিধা হলে, রোগীদের পুষ্টির জন্য নাকে নল দিয়ে খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এই জীবনরক্ষাকারী ব্যবস্থাগুলো স্ট্রোক পরবর্তী জটিলতাগুলো এড়াতে এবং রোগীর শারীরিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক।
কম বয়সেও স্ট্রোক কেন হয়? এই পোস্ট থেকে জানুন।
ঝুঁকিপূর্ণ রোগ নিয়ন্ত্রণ
স্ট্রোকের চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর যদি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হার্টের মতো ঝুঁকিপূর্ণ রোগ থাকে, তবে সেগুলোকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা অত্যাবশ্যক। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ মস্তিষ্কের রক্তনালীর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায় এবং ডায়াবেটিস রক্তনালীগুলোকে দুর্বল করে জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়াতে পারে। একইভাবে, হার্টের বিভিন্ন সমস্যা যেমন অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন) মস্তিষ্কে রক্ত জমাট প্রেরণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এই রোগগুলোকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার মাধ্যমে স্ট্রোকের পুনরাবৃত্তি এবং অন্যান্য জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়, যা রোগীর দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জটিলতা প্রতিরোধ ও পুনর্বাসন
স্ট্রোকের পরে একজন রোগীর জরুরি চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো জটিলতা প্রতিরোধ এবং পুনর্বাসন। স্ট্রোক একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় অথবা রক্তক্ষরণ হয়, যার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্ট্রোকের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে পারে। জরুরি চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হলো এই জটিলতাগুলো প্রতিরোধ করা এবং যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে তোলা।
স্ট্রোকের পরপরই রোগীর শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থানে শুয়ে থাকার কারণে褥瘡 (Pressure Ulcer) বা বেড sore তৈরি হওয়া। এটি প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিতভাবে রোগীকে পাশ ফেরান এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে বালিশ দিয়ে সাপোর্ট দেন যাতে কোনো নির্দিষ্ট অংশে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। এছাড়া, স্ট্রোকের কারণে শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে, কারণ দুর্বল পেশী বা গিলতে অসুবিধার কারণে খাদ্য বা পানীয় শ্বাসনালীতে প্রবেশ করতে পারে।
তাই, রোগীকে সঠিক অবস্থানে রাখা এবং প্রয়োজনে শ্বাসনালী পরিষ্কার করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রক্তনালীতে জমাট বাঁধা (Deep Vein Thrombosis – DVT) স্ট্রোকের আরেকটি গুরুতর জটিলতা। দীর্ঘক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকার কারণে পায়ের গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, যা পরবর্তীতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এটি প্রতিরোধের জন্য রোগীকে দ্রুত হাঁটাচলা করানো, পায়ের ব্যায়াম করানো এবং প্রয়োজনে ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
জটিলতা প্রতিরোধের পাশাপাশি স্ট্রোকের জরুরি চিকিৎসার একটি অপরিহার্য অংশ হলো পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করা। স্ট্রোকের ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতা যেমন – নড়াচড়া, কথা বলা, খাবার গেলা, মনে রাখা ইত্যাদিতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই কার্যকারিতাগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য জরুরি চিকিৎসার শুরু থেকেই পুনর্বাসন থেরাপি শুরু করা হয়। ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy) এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফিজিওথেরাপিস্টরা বিভিন্ন ব্যায়াম ও শারীরিক কৌশলের মাধ্যমে রোগীর দুর্বল হাত-পায়ের পেশী শক্তিশালী করতে, নড়াচড়ার ক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীরের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেন। স্পিচ থেরাপি (Speech Therapy) उन রোগীদের জন্য অপরিহার্য যাদের কথা বলা বা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে অথবা খাবার গিলতে সমস্যা হচ্ছে। স্পিচ থেরাপিস্টরা বিভিন্ন ব্যায়াম ও পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীর যোগাযোগ করার ক্ষমতা এবং খাবার গেলার প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করেন।
শারীরিক পুনর্বাসনের পাশাপাশি স্ট্রোক রোগীদের মানসিক ও সামাজিক সহায়তা প্রদান করাও জরুরি। স্ট্রোকের পরে রোগী হতাশা, উদ্বেগ বা অন্যান্য মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদাররা কাউন্সেলিং এবং থেরাপির মাধ্যমে রোগীকে এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সাহায্য করেন এবং মানসিক শক্তি যোগান। এছাড়াও, পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুবান্ধবদের সমর্থন ও সহানুভূতি রোগীর মনোবল বাড়াতে এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। সামাজিক সহায়তা রোগীকে সমাজে পুনরায় মিশে যেতে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে উৎসাহিত করে।
মোটকথা, স্ট্রোক রোগীর জরুরি চিকিৎসায় জটিলতা প্রতিরোধ এবং পুনর্বাসন একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। দ্রুত এবং সমন্বিত উপায়ে এই দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিলে রোগীর জীবন রক্ষা করা এবং তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
যেকোনো বিশেষ পরামর্শ পেতে – 01760-636324 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ নিউরোফিট