PLID জনিত কোমর ব্যথা এবং এর সঠিক চিকিৎসা-
PLID হলো প্রলাপ্স লাম্বার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক। এটি কোমর ব্যথার একটি অন্যতম কারণ। আমাদের কোমরে ৫টি লাম্বার কশেরুকা রয়েছে। প্রতিটি কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে কশেরুকার ডিস্ক। এই ডিস্ক দুইটি অংশ নিয়ে গঠিত। বাহিরের দিকে থাকে অ্যানুলাস ফাইব্রোসাস এবং ভেতরের দিকে থাকে নরম জেলির ন্যায় নিউক্লিয়াস পালপোসাস। এই অ্যানুলাস ফাইব্রোসাসটি নিউক্লিয়াস পালপোসাস এর চারদিকে আবরণ হিসেবে থাকে। PLID তে এই অ্যানুলাস ফাইব্রোসাসটি ক্ষয় হয়ে ছিড়ে যায় এবং ভেতরের নরম জেলির মতো অংশটি বের হয়ে যায় । এই বের হওয়া অংশটি কশেরুকার চারপাশ থেকে বের হওয়া নার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি করে। ফলে কোমরে প্রচন্ড ব্যথার সৃষ্টি হয়। এমনকি এই ব্যথা ধীরে ধীরে পায়ের পেছনের দিকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাধারণত ৪ ও ৫ নম্বর লাম্বার কশেরুকায় এটি বেশি হয়।
কেন হয়?
১) শরীরে ওজন বেড়ে গেলে।
২) কোনো কারনে কোমড়ে আঘাত পেলে।
৩) অনেক বছর ধরে দাড়িয়ে / সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করলে।
৪) কোমড়ের মাংসপেশীগুলো সার্পোট না দিলে অথবা পেশীসমূহ টাইট হয়ে গেলে ।
৫) কোমড়ে অতিরিক্ত চাপ পড়লে বা ভারী কোন বস্তু তোলার সময় সঠিক নিয়মে না টানলে কোমরে চাপ পড়ে।
লক্ষণ বা উপসর্গঃ
১) কোমরে তীব্র ব্যথা।
২) ব্যথা কোমর, ঊরু ও পায়ের নিচের দিকে ছড়িয়ে পরে, এমনকি পায়ের বৃদ্ধ আঙুলেও ব্যথা চলে আসতে পারে।
৩) সোজা হয়ে দাঁড়াতে কষ্ট হয়।
৪) দীর্ঘক্ষন হাঁটলে বা কাজ করলে ব্যথা বৃদ্ধি পায়।
৫) অনেক সময় পা ঝিন ঝিন করে, অবশ ভাব ও দুর্বলতা দেখা দেয়।
৬) হাঁচি কাশির সময় ব্যথা অনুভূত হয়।
৭) গুরুতর পর্যায়ে চলে গেলে রোগীর প্রসাব পায়খানা ধরে রাখতে কষ্ট হয়।
৮) সামনের দিকে ঝুঁকে কোনো কাজ করলে/ দাড়িয়ে নামাজ পড়লে ব্যথা বেড়ে যায়।
৯) অনেক সময় দেখা যায় রোগীর কোমর বাঁকা হয়ে যেকোনো একদিকে সরে আসে।
১০) হাঁটতে শুরু করলে ব্যথার জন্য পা অসাড় হয়ে আসে।
রোগ নির্ণয়ঃ
সাধারনত কিছু ইমেজিং পরীক্ষার মাধ্যমে PLID নির্নয় করা হয়। এক্ষেত্রে এম. আর. আই রোগ নির্নয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তাছাড়াও ফিজিওথেরাপী চিকিৎসকগন কিছু শারীরিক অ্যাসেসমেন্ট এবং কিছু বিশেষায়িত পরীক্ষার মাধ্যমে PLID রোগ নির্নয় করে থাকেন।
চিকিৎসাঃ
- আনকেই মনে করে PLID এর একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় মৃদু ও মাঝারী ধরনের PLID এর ক্ষেত্রে ফিজিও থেরাপী চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এবং রোগ নিমূর্লে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দেয়।
- ব্যথানাশক ঔষধ খেলে ব্যথা সাধারনত কমে যায় কিন্তু সেটি স্থায়ী সমাধান নয়।
- অনেকে স্টেরয়েড জাতীয় ইনজেকশন ও ব্যবহার করে এতে দ্রুত ব্যথা কমে গেলেও স্থায়ীভাবে সমাধান হয় না।
- ফিজিওথেরাপী চিকিৎসকগন রোগীর বয়স, অবস্থা এবং ব্যথার প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে চিকিৎসার ধাপ সাজিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে ডিরেকশনাল প্রেফারেন্স অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
- রোগীকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেক এক্সটেনশন ব্যায়ামগুলো করানো হয়।
- পিঠের সে পেশীগুলো মেরুদণ্ডের ভাটিব্রাগুলোকে ধরে রাখে যেগুলোর শক্তিবৃদ্ধিকরণ ব্যায়াম করানো হয়।
- মেরুদন্ডের হাড়গুলোর সন্ধিস্থলগুলোকে মবিলাইজেশন দেওয়া হয়।
- তাছাড়া কোমড়ের পেশীগুলোর এবং আশেপাশের সফট টিস্যুুগুলোর ম্যানুপুলেন করা হয়ে থাকে।
- কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজের মাধ্যমে ব্যথা কমানো হয়।
- UST, TENS ও হট থেরাপীর মাধ্যমে ব্যথা কমানো হয়
- আকুপাংচার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে
- এনএমইএস।
- ওজন থেরাপির সাহায্য রোগি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে।
উপদেশ-
PLID জনিত কোমর ব্যথায় কিছু উপদেশ অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যেমনঃ
- নিচু হয়ে ভারী কোনো কিছু তোলা যাবে না।
- শক্ত বিছানায় ঘুমাতে হবে।
- সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করা যাবে না।
- ধূমপান ত্যাগ করতে হবে ।
- দূরে কোথাও যানবাহনে যাতায়াতের সময় কোমরের বেল্ট ব্যবহার করতে হবে।