মাইগ্রেনঃ কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও এর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

মাইগ্রেন কি, কেন হয়, কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

মাইগ্রেন হলো এক ধরনের তীব্র মাথাব্যথা যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে খুব খারাপভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এটা শুধু একটা সাধারণ মাথাব্যথা নয়, এর সঙ্গে আরও অনেক রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত মাথার এক পাশে হয়, তবে মাঝে মাঝে দু’পাশেও হতে পারে। এই ব্যথাটা এমন মনে হয় যেন মাথা দপদপ করছে বা কাঁপছে। ব্যথার সাথে আলো ও শব্দ অসহ্য লাগতে পারে, বমি বমি ভাব হতে পারে, এমনকি চোখে কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

মাইগ্রেন কী?

মাইগ্রেন হলো মস্তিষ্কের একটি বিশেষ ধরনের সমস্যা, যা সাধারণ মাথাব্যথার চেয়ে অনেক বেশি তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই ব্যথা সাধারণত মাথার এক দিক থেকে শুরু হলেও, ধীরে ধীরে তা পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। মাইগ্রেনের ব্যথা প্রায়শই দপদপ করার মতো অনুভূত হয় এবং শারীরিক নড়াচড়া বা কার্যকলাপের সাথে এর তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। এটি কেবল একটি মাথাব্যথা নয়; এর সঙ্গে প্রায়শই বিভিন্ন স্নায়বিক উপসর্গ যুক্ত থাকে, যা দৈনন্দিন জীবনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে।

মাইগ্রেনের সময় কেবল মাথাব্যথাই হয় না, এর সঙ্গে আরও কিছু কষ্টদায়ক উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন, উজ্জ্বল আলো বা উচ্চ শব্দ অসহনীয় মনে হতে পারে, অনেকের বমি বমি ভাব হয় বা বমিও হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে, ব্যথার আগে চোখে ঝাপসা দেখা বা আলোর ঝলকানি দেখা যেতে পারে, যাকে “অরা” বলা হয়। এছাড়া, হাত-পায়ে অবশ লাগা বা ঝিনঝিন করার মতো অনুভূতিও হতে পারে। মাইগ্রেনের একটি আক্রমণ সাধারণত ৪ ঘণ্টা থেকে শুরু করে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, যার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে স্বাভাবিক কাজকর্মে মনোযোগ দেওয়া বা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

সায়াটিকা নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের আইস পোস্টটি পড়ে নিন।

মাইগ্রেন কেন হয় (কারণ ও ঝুঁকি)

মাইগ্রেন কেন হয়? (কারণ ও ঝুঁকি)

মাইগ্রেন কেন হয়, এর সুনির্দিষ্ট কারণ বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি জানতে পারেননি। তবে ধারণা করা হয়, এটি বংশগত, পরিবেশগত এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের কিছু অভ্যাসের সম্মিলিত প্রভাবে হয়ে থাকে।

মাইগ্রেনের সম্ভাব্য কারণ

মাইগ্রেন হওয়ার পেছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ ও প্রভাবক চিহ্নিত করা হয়েছে:

  • বংশগত প্রভাবঃ মাইগ্রেনের একটি শক্তিশালী পারিবারিক যোগসূত্র রয়েছে। আপনার বাবা-মা, ভাই বা বোনের যদি মাইগ্রেন থাকে, তাহলে আপনার এটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৭০% মাইগ্রেন রোগীর ক্ষেত্রেই পরিবারে মাইগ্রেনের ইতিহাস থাকে।
  • মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতাঃ মস্তিষ্কের কিছু রাসায়নিক উপাদান, বিশেষ করে সেরোটোনিন, মাইগ্রেনের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। মাইগ্রেনের আক্রমণের সময় সেরোটোনিনের মাত্রা হঠাৎ কমে যেতে পারে, যার ফলে মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলো অস্বাভাবিকভাবে প্রসারিত হয় এবং ব্যথার সৃষ্টি হয়।
  • হরমোনের পরিবর্তনঃ নারীদের ক্ষেত্রে হরমোনের ওঠানামা মাইগ্রেনের একটি প্রধান কারণ। মাসিকের সময়, গর্ভাবস্থায়, মেনোপজের সময় অথবা হরমোনজনিত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল সেবনের ফলে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন হয়, যা মাইগ্রেনকে উসকে দিতে পারে। এই কারণেই পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে মাইগ্রেন তিনগুণ বেশি দেখা যায়।
  • পরিবেশগত প্রভাবঃ আমাদের চারপাশের কিছু উপাদান মাইগ্রেনের আক্রমণকে উসকে দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে: বেশি উজ্জ্বল বা ঝলমলে আলো, যা চোখে অস্বস্তি তৈরি করে। অনেক জোরে শব্দ বা কোলাহলও মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া, তীব্র গন্ধ, যেমন পারফিউম, পেট্রোল বা রান্নার গন্ধও অনেকের জন্য মাইগ্রেনের ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন, যেমন তাপমাত্রা বা বায়ুচাপের আকস্মিক ওঠানামাও মাইগ্রেনকে প্রভাবিত করতে পারে।

মাইগ্রেনের ঝুঁকির কারণ

কিছু নির্দিষ্ট বিষয় মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। এর মধ্যে রয়েছে বয়স, কারণ মাইগ্রেন সাধারণত কৈশোরে বা ২০-৩০ বছর বয়সে শুরু হয়, যদিও এটি যেকোনো বয়সেই দেখা দিতে পারে। লিঙ্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ; নারীদের মধ্যে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মাইগ্রেন বেশি দেখা যায়। আপনার পারিবারিক ইতিহাস থাকলে, অর্থাৎ পরিবারে কারো মাইগ্রেন থাকলে আপনারও এটি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ মাইগ্রেনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, বিষণ্নতা, উদ্বেগজনিত সমস্যা বা ঘুমের ব্যাধিও মাইগ্রেন হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

মাইগ্রেনের লক্ষণ ও উপসর্গ

মাইগ্রেনের লক্ষণ ও উপসর্গ

মাইগ্রেনের লক্ষণগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ উপসর্গ প্রায়শই দেখা যায়। মাইগ্রেনের সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ হলো মাথায় তীব্র ব্যথা। এই ব্যথা সাধারণত মাথার এক পাশে শুরু হয়, তবে কখনো কখনো পুরো মাথা জুড়েও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যথার ধরনটা এমন হয় যেন মাথা দপদপ করছে বা কাঁপছে, এবং যেকোনো শারীরিক নড়াচড়া বা কার্যকলাপের সাথে এই ব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে।

মাথাব্যথার পাশাপাশি মাইগ্রেনের সঙ্গে আরও বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। অনেকের বমি বমি ভাব হয় বা বমি হয়ে যায়, যা ব্যথার তীব্রতার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। মাইগ্রেনের সময় উজ্জ্বল আলো বা জোরে শব্দ সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে; তাই অনেকে এই সময় অন্ধকার ও শান্ত পরিবেশে বিশ্রাম নিতে পছন্দ করেন। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে, ব্যথার আগে দৃষ্টিবিভ্রম বা “অরা” দেখা দেয়। এর ফলে চোখের সামনে আলোর ঝলকানি, কালো দাগ, বা বাঁকা-বাঁকা রেখা দেখা যেতে পারে, আবার কিছুক্ষণের জন্য চোখে কম দেখাও অস্বাভাবিক নয়। এছাড়াও, হাত, পা বা মুখে অসাড়তা বা ঝিনঝিন করার মতো অনুভূতি হতে পারে।

মাইগ্রেনের অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে বেশি ঘাম হওয়া, মনোযোগের অভাব বা বিভ্রান্তি, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, এমনকি ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া। মাইগ্রেনের একটি আক্রমণ সাধারণত ৪ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা আক্রান্ত ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজকর্মে মারাত্মকভাবে বাধা সৃষ্টি করে।

নিউরোপ্যাথি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।

মাইগ্রেনের প্রতিকার ও চিকিৎসা

মাইগ্রেনের প্রতিকার ও চিকিৎসা

মাইগ্রেন পুরোপুরি সারানো সম্ভব নয়, তবে সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন করে এর তীব্রতা ও কতবার হয়, তা কমানো যায়।

১. জীবনযাত্রার পরিবর্তন

মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে আমাদের জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা খুবই জরুরি। প্রথমে, আপনার মাইগ্রেনকে কোন জিনিসগুলো বাড়িয়ে তোলে, সেগুলো খুঁজে বের করুন এবং এড়িয়ে চলুন (ট্রিগার এড়ানো)। যেমন, কিছু নির্দিষ্ট খাবার (চকোলেট, পনির, অ্যালকোহল), উজ্জ্বল আলো, জোরে শব্দ বা মানসিক চাপ আপনার মাইগ্রেনকে ট্রিগার করতে পারে। প্রতিদিন নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত, কারণ কম বা বেশি ঘুম দুটোই মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে। এছাড়া, নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটিও মাইগ্রেনকে উসকে দিতে পারে।

মানসিক চাপ কমানো মাইগ্রেন প্রতিরোধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়; এর জন্য ধ্যান, যোগব্যায়াম বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। সবশেষে, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাঁতার বা যোগব্যায়াম মাইগ্রেন কমাতে সাহায্য করে, তবে অতিরিক্ত ব্যায়াম থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন, যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন, কারণ অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ হিতে বিপরীত ফল দিতে পারে। 

২. বিকল্প চিকিৎসা

ওষুধের পাশাপাশি কিছু প্রাকৃতিক বা বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিও মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এর মধ্যে একটি হলো বায়োফিডব্যাক, যা আপনাকে আপনার শরীরের কিছু স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যেমন পেশির টান বা হৃদস্পন্দন, নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়। এটি শরীরকে শান্ত করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ধ্যানও একটি কার্যকর উপায়; নিয়মিত ধ্যান অভ্যাস করলে মানসিক চাপ কমে এবং মাইগ্রেনের তীব্রতা ও কতবার হচ্ছে, তা কমতে পারে।

এছাড়া, আকুপ্রেশার ও আকুপাংচার হলো প্রাচীন চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি, যা মাইগ্রেনের ব্যথা উপশমে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

৩. ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

যদি ঘাড়ের মাংসপেশিতে টান বা দুর্বলতার কারণে মাইগ্রেন হয়, তাহলে ফিজিওথেরাপি খুব উপকারী হতে পারে। ফিজিওথেরাপিতে যা যা করা হয়:

যদি আপনার মাইগ্রেনের কারণ ঘাড়ের মাংসপেশিতে টান বা দুর্বলতা হয়, তাহলে ফিজিওথেরাপি খুব উপকারী হতে পারে। ফিজিওথেরাপিতে কিছু বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে এই ধরনের ব্যথা বা সমস্যা কমানো যায়:

  • ঘাড় ও মাথার পেশির ব্যায়াম: ফিজিওথেরাপিস্টরা এমন কিছু ব্যায়াম শেখান যা ঘাড় ও মাথার মাংসপেশির টান কমাতে এবং ওই অংশে রক্ত চলাচল বাড়াতে সাহায্য করে। এতে করে ব্যথার তীব্রতা কমে আসে।
  • সঠিক ভঙ্গিমা শেখানো: অনেক সময় ভুলভাবে বসা বা দাঁড়ানোর কারণে ঘাড়ে চাপ পড়ে এবং মাইগ্রেন শুরু হয়। ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে সঠিক ভঙ্গিমা বা পস্চার (posture) শিখিয়ে দেন, যা ঘাড়ের উপর চাপ কমিয়ে ব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • ম্যানুয়াল থেরাপি: এটি এক ধরনের হাতে করা চিকিৎসা, যেখানে ফিজিওথেরাপিস্টরা ঘাড় ও মাথার মাংসপেশি এবং জয়েন্টের টান কমাতে আলতোভাবে চাপ প্রয়োগ করেন বা ম্যাসাজ করেন।
  • স্ট্রেস কমানোর কৌশল: মানসিক চাপ হচ্ছে এই সমস্যার একটি বড় কারণ। ফিজিওথেরাপিতে কিছু বিশেষ শিথিলকরণ কৌশল শেখানো হয়, যা মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ: এই ব্যথা কমানোর জন্য একজন ফিজিওথেরাপিস্ট আপনার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী একটি ব্যক্তিগত ব্যায়াম পরিকল্পনা তৈরি করে দিতে পারেন। নিয়মিত এই ব্যায়ামগুলো করলে এর আক্রমণের সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই কমে আসতে পারে।

স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি সম্পর্কে বা এর বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

মাইগ্রেন সাধারণত নিজে নিজেই কিছুটা সামলানো যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরি। নিচের যেকোনো লক্ষণ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যান:

  • অস্বাভাবিক বা তীব্র ব্যথা: যদি আপনার মাথাব্যথা হঠাৎ করে অনেক বেশি বেড়ে যায়, অথবা যদি ব্যথার ধরন আগের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন মনে হয়।
  • দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা: যদি মাইগ্রেনের ব্যথা ৭২ ঘণ্টার (তিন দিনের) বেশি সময় ধরে চলতে থাকে এবং কমতে না চায়।
  • বারবার বমি বা অবশ লাগা: যদি এর সাথে বারবার বমি হয়, হাত-পায়ে অবশ অনুভূতি হয়, চোখে দেখতে সমস্যা হয়, অথবা কথা বলতে গিয়ে জড়তা আসে।
  • দৈনন্দিন কাজে বাধা: যদি এর কারণে আপনার স্বাভাবিক কাজকর্ম, যেমন অফিস, পড়াশোনা বা সামাজিক জীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
  • নতুন বা অস্বাভাবিক লক্ষণ: যদি এই ব্যথার সাথে নতুন কোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন জ্বর, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, অথবা হঠাৎ করে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া।

মনে রাখবেন, মাথাব্যথা কখনো কখনো মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, টিউমার বা স্ট্রোকের মতো গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে। তাই, কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।

শেষ কথা

মাইগ্রেন কেবল একটি সাধারণ মাথাব্যথা নয়; এটি একটি জটিল স্নায়বিক সমস্যা যা আমাদের দৈনন্দিন জীবন, কাজ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এমন সমস্যা হলে তীব্র ব্যথা ছাড়াও নানা রকম শারীরিক অস্বস্তি দেখা দেয়, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে কঠিন করে তোলে।

তবে ভালো খবর হলো, সঠিক পদক্ষেপ নিলে মাইগ্রেনকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন জীবনযাত্রায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যেমন আপনার এই ব্যথাকে উসকে দেয় এমন বিষয়গুলো (ট্রিগার) এড়িয়ে চলা। পাশাপাশি, ডাক্তারের পরামর্শে সঠিক ওষুধ সেবন এবং কিছু বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করেও এর তীব্রতা ও আক্রমণের সংখ্যা কমানো যায়।

যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ এই সমস্যায় ভোগেন, তবে দেরি না করে একজন চিকিৎসক বা ফিজিওথেরাপিস্টের সাথে পরামর্শ করুন। তারা আপনার অবস্থা বুঝে একটি সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করে দেবেন। মনে রাখবেন, সঠিক যত্ন এবং সচেতনতার মাধ্যমে মাইগ্রেনের নেতিবাচক প্রভাবগুলো অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব, যা আপনাকে একটি উন্নত জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top