ডিপ্রেশন

ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা এমন একটি অসুখ, যাকে অনেকেই গুরুত্ব দেন না। ডিপ্রেশন সম্পর্কে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণার কারণেই এমনটা ঘটে। এই ভুল ধারণাগুলো অগ্রাহ্য করার ফলে অনেক সময় ভয়ানক ঘটনা ঘটে যায়। ডয়চে ভেলে বিষণ্ণতা নিয়ে যে ভুল ধারণাগুলো আমরা সাধারণত পোষণ করি, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আসুন, সেই ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কে জানি।

ডিপ্রেশন এর কারণঃ

ডিপ্রেশন একটি জটিল মানসিক রোগ যার কোন একক কারণ নেই। জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং পরিবেশগত কারণগুলির মিথস্ক্রিয়া সাধারণত এর বিকাশে ভূমিকা পালন করে।

জৈবিক কারণ:

  • মস্তিষ্কের রসায়ন: মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার, যেমন সেরোটোনিন, নোরপাইনেফ্রিন এবং ডোপামিন, মেজাজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিপ্রেশনে ভোগা ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে এই নিউরোট্রান্সমিটারগুলির ভারসাম্যহীনতা দেখা যেতে পারে।
  • জিনগত: ডিপ্রেশনে ভোগার ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন জিনগত ঝুঁকিপূর্ণ কারণ রয়েছে। যদি আপনার পরিবারে ডিপ্রেশনের ইতিহাস থাকে তবে আপনারও এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • মস্তিষ্কের গঠন: ডিপ্রেশনে ভোগা ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের কিছু অংশ, যেমন হিপোক্যাম্পাস এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স, আকারে ছোট হতে পারে।

মনস্তাত্ত্বিক কারণ:

  • মানসিক চাপ: দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র মানসিক চাপ ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • ট্রমা: শৈশবে অপব্যবহার, অবহেলা বা অন্যান্য ট্রমাটিক অভিজ্ঞতা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • মানসিক নেতিবাচক চিন্তাভাবনা: নেতিবাচক চিন্তাভাবনার প্যাটার্ন, যেমন নিজেকে সমালোচনা করা বা ভবিষ্যত সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা, ডিপ্রেশনে অবদান রাখতে পারে।
  • নিম্ন আত্মসম্মান: নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক অনুভূতি ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

পরিবেশগত কারণ:

  • সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: সামাজিক সমর্থনের অভাব বা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়া ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা: দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অসুস্থতা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • দুর্বল আর্থ-সামাজিক অবস্থা: দারিদ্র্য এবং বৈষম্য ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • মাদক ও অ্যালকোহলের অপব্যবহার: মাদক ও অ্যালকোহলের অপব্যবহার ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে এবং এটিকে আরও খারাপ করতে পারে।

এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ডিপ্রেশনের কোন একক কারণ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এটি জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং পরিবেশগত কারণগুলির মিথস্ক্রিয়ার কারণে হয়।

ডিপ্রেশনের  লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:

  • দুঃখের অনুভূতি বা মেজাজের দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন: এটি বেশিরভাগ দিনের বেশিরভাগ সময়ের জন্য উপস্থিত থাকতে পারে।
  • আনীহা বা আনন্দের অভাব: এমন জিনিসগুলিতে আগ্রহ বা আনন্দ হারানো যা একসময় উপভোগ্য ছিল।
  • খাওয়ার পরিবর্তন: ওজন কমানো বা বাড়ানো যা ডায়েটিংয়ের সাথে সম্পর্কিত নয়।
  • ঘুমের সমস্যা: ঘুমাতে অসুবিধা হওয়া বা খুব বেশি ঘুমানো।
  • দুর্বল বা ক্লান্তির অনুভূতি: প্রতিদিনের কাজগুলি সম্পাদন করতে কঠিন হতে পারে।
  • চিন্তাভাবনা, মনোযোগ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্যা: মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা, স্মৃতিশক্তি বা সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা।
  • অস্থিরতা বা মন্থরতা: অস্থির বোধ করা বা ধীর গতিতে কথা বলা বা চলাফেরা করা।
  • মূল্যহীনতা বা অপরাধবোধের অনুভূতি: নিজেকে অপ্রয়োজনীয় বা অন্যদের চেয়ে খারাপ মনে করা।
  • মৃত্যু বা আত্মহত্যার চিন্তা: মৃত্যু সম্পর্কে চিন্তা করা বা নিজেকে বা অন্যদের ক্ষতি করার চিন্তা করা।

ডিপ্রেসন থেকে বাঁচার জন্য যা করা যেতে পারেঃ

ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার জন্য আমাদের জীবনে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনা জরুরি। প্রথমত, আমাদের নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত, যা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় বাইরে কাটানো, প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকা আমাদের মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভালো ঘুম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসও খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয়জনের সাথে খোলামেলা আলোচনা, নিজের অনুভূতিগুলো শেয়ার করা, এবং প্রয়োজনে পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া উচিত। মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম মনের শান্তি এনে দেয় এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা, যেমন ছবি আঁকা, গান শোনা বা গাইতে পারা, বই পড়া ইত্যাদি আমাদের মনকে ভালো রাখতে সহায়ক। সবশেষে, আমাদের নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং নিজেদের প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন, কারণ আমরা সবাই জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মানসিক চাপে পড়ি এবং তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদেরকে সচেতনভাবে প্রচেষ্টা করতে হবে।