শিশুর দেরিতে কথা বলা কি অটিজমের লক্ষণ

শিশুর দেরিতে কথা বলা কি অটিজমের লক্ষণ?

শিশুদের মুখে প্রথম বুলি ফোটা বাবা-মায়ের জন্য এক অসাধারণ মুহূর্ত। ছোট্ট সোনামণি যখন ‘মা’ বা ‘বাবা’ বলে ডাকতে শেখে, তখন সে আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, আশেপাশের শিশুরা যেখানে ফটাফট কথা বলতে শুরু করেছে, আপনার শিশুটি সেখানে একদম চুপচাপ। শিশুর দেরিতে কথা বলা দেখলে তখন মনটা একটু দমে যায়, দুশ্চিন্তা হওয়াও খুব স্বাভাবিক। মনে প্রশ্ন আসে, “আমার শিশুর কি কিছু সমস্যা হচ্ছে? ও কি অটিজমের দিকে যাচ্ছে?” এই প্রশ্নটা হাজারো বাবা-মায়ের মনে আসে, আর এর কোনো সহজ ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ উত্তর নেই।

আসলে, শিশুদের কথা বলার একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে, যাকে আমরা স্বাভাবিক ধরে নিই। সাধারণত, একটা শিশু যখন ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সী হয়, তখন তারা টুকটাক একটা-দুটো শব্দ বলতে শুরু করে, যেমন ‘পানি’, ‘দাও’, ‘টাটা’। আর দুই বছর বয়সের মধ্যে তারা ছোট ছোট বাক্য গুছিয়ে বলতে পারে, যেমন ‘আমি খাবো’, ‘ওটা দাও’। যদি আপনার শিশু এই সময়গুলোর মধ্যে কথা বলতে শুরু না করে, অথবা তার শব্দভাণ্ডার খুব কম থাকে, অর্থাৎ সে খুব অল্প শব্দ ব্যবহার করে, তাহলে আমরা বলি তার কথা বলতে দেরি হচ্ছে।

তবে, কথা বলতে দেরি হওয়া মানেই যে সেটা বড় কোনো সমস্যার লক্ষণ, এমনটা সব সময় নাও হতে পারে। অনেক সময় এটা সাময়িকও হতে পারে, বা অন্য কোনো ছোট কারণেও হতে পারে। কিন্তু যদি এমনটা হয়, তাহলে বাবা-মায়ের জন্য এটা জানা জরুরি যে কখন বিষয়টাকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং কখন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে। মনে রাখবেন, প্রতিটি শিশু আলাদা, এবং তাদের বিকাশের গতিও ভিন্ন হয়।

মটর নিউরন ডিজিজ সম্পর্কে জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

দেরিতে কথা বলার সম্ভাব্য কারণ

দেরিতে কথা বলার সম্ভাব্য কারণ

শিশুর দেরিতে কথা বলার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। অটিজম এর একটি কারণ হতে পারে, তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়। বাবা-মা হিসেবে এই অন্য কারণগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো, যাতে দুশ্চিন্তা না করে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেন।

প্রথমত, শ্রবণ সমস্যা একটি বড় কারণ হতে পারে। ভাবুন তো, যদি একটি শিশু সঠিকভাবে শুনতে না পায়, তাহলে সে কীভাবে শিখবে কথা বলতে? সে যখন শব্দগুলো শুনতেই পাবে না, তখন সেগুলো চিনতে বা বলতেও পারবে না। তাই, যদি আপনার মনে হয় শিশু আপনার ডাকে ঠিকমতো সাড়া দিচ্ছে না বা উচ্চস্বরেও কিছু শুনতে পাচ্ছে না, তাহলে দেরি না করে একজন ডাক্তারের কাছে তার কানের পরীক্ষা করানো খুব জরুরি।

দ্বিতীয়ত, পরিবেশগত প্রভাব শিশুর কথা বলায় অনেক বড় ভূমিকা রাখে। আজকালকার ব্যস্ত জীবনে অনেক সময় আমরা শিশুদের সাথে যথেষ্ট কথা বলি না, গল্প বলি না বা ছড়া শোনাই না। একটি শিশুর মস্তিষ্কে নতুন নতুন শব্দ প্রবেশ করানো এবং সেগুলোকে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা খুব জরুরি। যদি শিশু পর্যাপ্ত মৌখিক উদ্দীপনা না পায়, অর্থাৎ তার আশেপাশে খুব কম কথা বলা হয় বা তাকে শেখানোর মতো পরিবেশ না থাকে, তাহলে তার কথা বলতে দেরি হতে পারে। শিশুর সাথে বেশি বেশি কথা বলুন, বই পড়ে শোনান, আর মজার মজার ছড়া শেখান।

তৃতীয়ত, মৌখিক-মোটর সমস্যা কথা বলার ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। কথা বলতে গেলে আমাদের জিহ্বা, ঠোঁট, মুখের পেশী এবং চোয়ালের সঠিক নড়াচড়া দরকার হয়। যদি কোনো শিশুর এই পেশীগুলো দুর্বল হয় বা তাদের সমন্বয় ঠিকমতো না হয়, তবে শব্দ তৈরি করতে বা পরিষ্কারভাবে কথা বলতে তাদের কষ্ট হতে পারে। এটি এমন একটি সমস্যা যা বাইরে থেকে সবসময় বোঝা যায় না, তবে এর জন্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য লাগতে পারে।

চতুর্থত, বিকাশগত বিলম্ব শিশুর দেরিতে কথা বলার একটি সাধারণ কারণ। কিছু শিশুর শেখার গতি একটু ধীর হয়। তারা হয়তো বসতে, হাঁটতে বা কথা বলতে অন্য শিশুদের চেয়ে একটু বেশি সময় নেয়। এটা তাদের সামগ্রিক বিকাশেরই একটি অংশ। এর মানে এই নয় যে তাদের কোনো গুরুতর সমস্যা আছে, শুধু তাদের একটু বেশি সময় এবং সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে।

এবং পরিশেষে, কিছু শিশুর নির্দিষ্ট শেখার অক্ষমতা থাকতে পারে যা শুধু ভাষা শেখার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ, তাদের হয়তো অন্য সব কিছু ঠিকঠাক আছে, কিন্তু শুধুমাত্র নতুন শব্দ শিখতে বা বাক্য গঠন করতে তাদের বেশি অসুবিধা হয়। এটি অটিজম বা অন্য কোনো বড় সমস্যা নাও হতে পারে, শুধু ভাষার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ধরনের দুর্বলতা।

তাই, যদি আপনার শিশুর কথা বলতে দেরি হয়, হতাশ না হয়ে উপরোক্ত কারণগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। প্রয়োজনে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন। তিনি সঠিক কারণ নির্ণয় করে আপনাকে সঠিক দিশা দেখাতে পারবেন।

অটিজম এবং দেরিতে কথা বলা

অনেক বাবা-মাই চিন্তা করেন যে তাদের শিশুর কথা বলতে দেরি হলে তা অটিজমের লক্ষণ কিনা। চলুন এই ব্যাপারটা একটু সহজ করে বুঝি।

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে শিশুদের মস্তিষ্ক একটু ভিন্নভাবে কাজ করে। এর ফলে তাদের কিছু বিষয়ে অন্যদের থেকে আলাদা মনে হতে পারে। যেমন, তারা মানুষের সাথে মিশতে, কথা বলতে বা নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে একটু কঠিন সময় পার করে। অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে দেরিতে কথা বলা বা ভাষা শিখতে দেরি হওয়া খুবই সাধারণ। তবে শুধু দেরি করে কথা বললেই যে শিশু অটিস্টিক, তা কিন্তু নয়।

অটিজম বুঝবেন যে লক্ষণগুলো দেখে

দেরিতে কথা বলার পাশাপাশি অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে আরও কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা যায়। এগুলো দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার শিশুর জন্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য দরকার কিনা:

  • চোখে চোখ না রাখা: যখন আপনি আপনার শিশুর সাথে কথা বলছেন বা খেলছেন, তখন সে হয়তো আপনার চোখের দিকে সরাসরি তাকাবে না বা খুব কম তাকাবে।
  • নামে সাড়া না দেওয়া: নিজের নাম ধরে ডাকলে অনেক সময় তারা কোনো উত্তর দেয় না বা খুব দেরিতে সাড়া দেয়, যেন তারা শুনতেই পায়নি।
  • একই কাজ বারবার করা: তারা হয়তো একই জিনিস বারবার করবে, যেমন হাত নাড়াবে, শরীর দোলাবে, বা একই খেলনা নিয়ে নির্দিষ্ট একটা কাজ বারবার করবে।
  • সীমিত আগ্রহ: বেশিরভাগ সময় তারা নির্দিষ্ট কিছু জিনিস বা খেলাতেই শুধু আগ্রহী হয় এবং অন্য কিছুতে একদমই মনোযোগ দিতে চায় না।
  • সামাজিক মেলামেশায় অনীহা: অন্য শিশুদের সাথে মিশতে বা একসাথে খেলতে তাদের তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। তারা নিজেদের মতো থাকতে পছন্দ করে।
  • ইশারা করতে সমস্যা: মনের কথা বোঝানোর জন্য হাত দিয়ে ইশারা করা বা অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করতে তাদের কষ্ট হয়।

যদি আপনার শিশুর মধ্যে দেরিতে কথা বলার সাথে সাথে এই ধরনের কিছু লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলা খুবই জরুরি। তিনি শিশুর অবস্থা ভালোভাবে পরীক্ষা করে আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন। মনে রাখবেন, যত তাড়াতাড়ি সাহায্য নেওয়া যায়, শিশুর জন্য ততই ভালো।

বেলস পালসি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।

কখন আপনার শিশুর জন্য ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্য নেবেন

কখন আপনার শিশুর জন্য ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্য নেবেন?

বাবা-মা হিসেবে আমরা সবাই চাই আমাদের শিশুরা ভালোভাবে বেড়ে উঠুক। যখন আমরা দেখি অন্য শিশুরা কথা বলতে শুরু করেছে, আর আমাদের শিশুটি একটু পিছিয়ে আছে, তখন মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, “আমার শিশুর কি ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্য দরকার?”

আসলে, ফিজিওথেরাপিস্টের মূল কাজ হলো শরীর ও নড়াচড়ার সমস্যা দূর করা। যেমন, যদি শিশুর হাঁটতে, বসতে বা হাত-পা নাড়াতে সমস্যা হয়, তখন ফিজিওথেরাপিস্ট সাহায্য করেন। কিন্তু কথা বলা বা সামাজিক মেলামেশার মতো বিষয়গুলো সরাসরি ফিজিওথেরাপির আওতায় পড়ে না।

তাহলে কখন ফিজিওথেরাপিস্টের কথা ভাববেন?

যদি আপনার শিশু দেরিতে কথা বলা শুরু করে এবং এর সাথে আরও কিছু ব্যাপার লক্ষ্য করেন, যেমন:

  • চোখে চোখ রাখে না: যখন আপনি কথা বলছেন বা খেলছেন, তখন সরাসরি চোখের দিকে তাকাতে চায় না
  • নামে সাড়া দেয় না: নিজের নাম ধরে ডাকলে শুনতে পায় না বা কোনো উত্তর দেয় না।
  • একই কাজ বারবার করে: যেমন, হাত নাড়ায়, শরীর দোলায়, বা একই খেলনা নিয়ে একইভাবে অনেকক্ষণ ধরে খেলে।
  • মিশতে চায় না: অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে বা মিশতে আগ্রহ দেখায় না
  • ইশারা করতে পারে না: কোনো কিছু চাইতে বা বোঝাতে হাত দিয়ে ইশারা বা অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে না।

যদি এমন কিছু লক্ষণ দেখেন, তাহলে দেরি না করে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলা খুব জরুরি। তারা আপনার শিশুর পুরো বিকাশ ভালোভাবে দেখে বুঝতে পারবেন আসল সমস্যাটা কোথায় এবং কী করা দরকার।

গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, দেরিতে কথা বলা মানেই যে আপনার শিশু অটিস্টিক হবে, এমনটা কিন্তু নয়। তবে সময়মতো সঠিক সাহায্য পেলে শিশুদের বিকাশ অনেক ভালো হয়। আপনার শিশু বিশেষজ্ঞ প্রয়োজনে আপনাকে স্পিচ থেরাপিস্ট (যারা কথা বলতে সাহায্য করেন), অকুপেশনাল থেরাপিস্ট (যারা দৈনন্দিন কাজ শিখতে সাহায্য করেন), অথবা ফিজিওথেরাপিস্টের (যদি শরীরের নড়াচড়ায় সমস্যা থাকে) কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।

সবচেয়ে ভালো হয়, প্রথমে একজন অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যান। তিনিই আপনার শিশুর জন্য সবচেয়ে সঠিক পথ দেখাবেন।

কেন নিউরোফিটকে (Neurofit) আপনার পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন ?

এই ধরনের পরিস্থিতিতে নিউরোফিট (Neurofit) আপনার পাশে আছে। আমরা বুঝি যে প্রতিটি শিশু আলাদা, আর তাদের বিকাশের জন্য বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। আমাদের এখানে শুধু দেরিতে কথা বলা বা অটিজমের লক্ষণযুক্ত শিশুদের জন্যই নয়, বরং যাদের হাঁটাচলায় সমস্যা, শেখার সমস্যা বা অন্য কোনো বিকাশের চ্যালেঞ্জ আছে, তাদের সবার জন্য আমরা সাহায্য করি।

নিউরোফিট (Neurofit)-এর ডাক্তার এবং থেরাপিস্টরা খুব অভিজ্ঞ। তারা আপনার শিশুর সমস্যা ভালোভাবে বুঝে একটি বিশেষ পরিকল্পনা তৈরি করেন, যা আপনার শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো। আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিটি শিশুর লুকানো ক্ষমতাকে বের করে আনা এবং তাদের ভালোভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা। এখানে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি আছে এবং পরিবেশটা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে শিশুরা হাসতে খেলতে থেরাপি নিতে পারে।

আপনার শিশুর সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নিউরোফিট (Neurofit) সব সময় আপনার সাথে আছে। আপনার শিশুর সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য আজই আমাদের সাথে কথা বলুন।

__________________________________________________________

নিউরোফিট উত্তরা,

ঠিকানাঃ হাউজ ৪২, লেক ড্রাইভ রোড, ঢাকা ১২৩০

যেকোনো পরামর্শ পেতে – 01760-636324 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ নিউরোফিট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top