ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক কেন হয়

ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক কেন হয়?

ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক হওয়ার বিশেষ কারণ, লক্ষণ ও রোধ করার উপায় কি?

ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক হওয়ার মূল কারণগুলো দিনের বেলায় স্ট্রোকের কারণগুলোর মতোই। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল, ধূমপান এবং অতিরিক্ত ওজন—এই সমস্যাগুলো রক্তনালীতে ব্লকের সৃষ্টি করতে পারে। ঘুমের সময় শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম ধীর হয়ে গেলেও, এসব কারণে মস্তিষ্কের রক্তনালীতে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। ফলে মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেন এবং পুষ্টির অভাব দেখা দেয়, যা স্ট্রোকের কারণ ঘটায়। আজ এই পোস্টে আপনাদের সাথে ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক কেন হয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে, কারণ তখন লক্ষণগুলো সরাসরি চোখে পড়ে না। তবে কিছু বিষয় এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যেমন, যাদের স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো ঘুমের সমস্যা আছে, তাদের ঘুমের মধ্যে অক্সিজেনের অভাব হতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও, অনিয়মিত জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। তাই, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে হলে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি।

স্ট্রোক কী এবং কিভাবে হয়

স্ট্রোক কী এবং কিভাবে হয়?

স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের ভেতরে রক্ত চলাচলে সমস্যা হওয়া। ধরুন, আমাদের শরীরে যেমন রক্তনালী আছে, তেমনি আমাদের মস্তিষ্কেও ছোট ছোট রক্তের পাইপ আছে। কোনো কারণে যদি সেই পাইপগুলো বন্ধ হয়ে যায় অথবা ছিঁড়ে রক্ত বের হতে শুরু করে, তখনই স্ট্রোক হয়।

মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে বা কমে গেলে ইস্কেমিক স্ট্রোক হয়। এটা অনেকটা এমন, যেমন পানির পাইপে ময়লা জমে পানি যাওয়া আটকে গেলে হয়। আমাদের মাথার ভেতরের রক্তনালীতেও চর্বি বা অন্য কিছু জমে গিয়ে রাস্তা ছোট করে ফেলে, একসময় পুরো রাস্তাই বন্ধ করে দেয়। তখন মস্তিষ্কের ঐ অংশে রক্ত আর পৌঁছাতে পারে না। রক্ত না পেলে সেখানকার কোষগুলো অক্সিজেন পায় না, খাবার পায় না, তাই তারা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে মরে যায়। তাই ইস্কেমিক স্ট্রোক হলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার।

অন্যদিকে, হেমোরেজিক স্ট্রোক হয় যখন মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালী ফেটে গিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে। এটা অনেকটা ছেঁড়া পাইপ থেকে পানি বের হওয়ার মতো। আমাদের মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলো খুব নরম হয়। যদি কারো ব্লাড প্রেসার বেশি থাকে বা রক্তনালীতে কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে সেই নালী ফেটে যেতে পারে। যখন রক্ত বের হয়, তখন সেটা মস্তিষ্কের কোষগুলোর আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এই রক্ত কোষগুলোর উপর চাপ দেয় এবং তাদের কাজ করতে অসুবিধা সৃষ্টি করে। এছাড়াও, রক্তের কিছু জিনিস মস্তিষ্কের জন্য খারাপ হতে পারে। হেমোরেজিক স্ট্রোক ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে কম হয়, কিন্তু এটা বেশি বিপজ্জনক হতে পারে। তাই এর লক্ষণ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।

স্ট্রোক হয়েছে কিনা বুঝবেন কিভাবে? এই পোস্ট থেকে বিস্তারিত জেনে নিন।

ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ

ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ

১. স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea)

স্লিপ অ্যাপনিয়া হলো ঘুমের সময় শ্বাস নেওয়ার সমস্যা। যাদের এই রোগ আছে, তাদের ঘুমের মধ্যে কিছুক্ষণ পরপর শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। যখন শরীরে অক্সিজেনের অভাব হয়, তখন রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এমনটা চলতে থাকলে রক্তনালীগুলোর উপর বেশি চাপ পড়ে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

স্লিপ অ্যাপনিয়ার কিছু লক্ষণ আছে যা দেখে বোঝা যেতে পারে। যেমন, ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া বা হাঁপাতে থাকা, খুব জোরে নাক ডাকা এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা অনুভব করা। যদি আপনার বা আপনার পরিচিত কারো মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা যায়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে স্লিপ অ্যাপনিয়া নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

২. অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস

আমাদের শরীরের একটা নির্দিষ্ট ঘড়ি আছে, যা আমাদের কখন ঘুমোতে হবে এবং কখন জাগতে হবে তা নিয়ন্ত্রণ করে। যদি কারো ঘুমের সময়সূচি ঠিক না থাকে, মানে একেক দিন একেক সময় ঘুমানো বা ঘুম থেকে ওঠা, তাহলে এই স্বাভাবিক ছন্দটা নষ্ট হয়ে যায়। এই কারণে শরীরের বিভিন্ন কাজকর্ম যেমন রক্তচাপ এবং হরমোনের নিঃসরণ এলোমেলো হয়ে যেতে পারে।

অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাসের ফলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। আমরা আগেই জেনেছি যে উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের একটি প্রধান কারণ। তাই, ঘুমের সময়সূচি নিয়মিত না থাকলে স্ট্রোকের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো এবং একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠা শরীরের জন্য খুবই জরুরি, যাতে আমাদের ভেতরের ঘড়িটা ঠিকঠাক কাজ করে এবং আমরা সুস্থ থাকি।

৩. অতিরিক্ত বা কম ঘুম

ঘুম আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারি, তবে অতিরিক্ত ঘুম বা কম ঘুম দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ হতে পারে। দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন নয় ঘণ্টার বেশি ঘুমান অথবা যারা পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি থাকে।

ঠিক কেন অতিরিক্ত বা কম ঘুম স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হয়, অতিরিক্ত ঘুমের ফলে শরীরে অলসতা বাড়ে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে, কম ঘুম শরীরের উপর অনেক চাপ সৃষ্টি করে, যা রক্তচাপ বাড়াতে পারে এবং রক্তনালীগুলোর ক্ষতি করতে পারে। তাই, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো সবচেয়ে ভালো।

ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ হিসেবে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা

অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা

  • উচ্চ রক্তচাপঃ শরীরের রক্তচাপ যদি দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, তাহলে মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এই দুর্বল রক্তনালীগুলো ফেটে গিয়ে (হেমোরেজিক স্ট্রোক) অথবা সরু হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ করে (ইস্কেমিক স্ট্রোক) স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
  • ডায়াবেটিসঃ যাদের ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ আছে, তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে। এই অতিরিক্ত শর্করা রক্তনালীগুলোর ভেতরের স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ে, যা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে ইস্কেমিক স্ট্রোক ঘটাতে পারে।
  • স্থূলতাঃ অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা শরীরের বিভিন্ন অংশে চর্বি জমা করে। এই চর্বি রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। হৃদরোগের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে যেতে পারে বা রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, যা স্ট্রোকের কারণ হয়।
  • উচ্চ কোলেস্টেরলঃ রক্তে যদি খারাপ কোলেস্টেরলের (যেমন LDL) মাত্রা বেশি থাকে, তাহলে তা রক্তনালীর ভেতরের দেয়ালে জমা হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এই জমাট রক্তনালীকে সরু করে ফেলে এবং মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ব্যাহত করে, যা ইস্কেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণঃ ধূমপান রক্তনালীকে শক্ত ও সরু করে তোলে এবং রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বাড়ায়। অন্যদিকে, অতিরিক্ত অ্যালকোহল রক্তচাপ বাড়াতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। এই উভয় অভ্যাসই মস্তিষ্কের রক্তনালীর ক্ষতি করে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • পারিবারিক ইতিহাসঃ যদি পরিবারের নিকটাত্মীয় কারো (যেমন বাবা, মা, ভাই, বোন) আগে স্ট্রোক হয়ে থাকে, তাহলে আপনারও স্ট্রোকের ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে। এর কারণ হলো কিছু জিনগত বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে যা রক্তনালী বা রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে।

ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকের লক্ষণ ও পূর্বাভাস

ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকের লক্ষণ ও পূর্বাভাস

ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক হলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যা দেখে বোঝা যেতে পারে। এই লক্ষণগুলো চিনতে পারলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত, যাতে ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।

  • সকালে উঠে যদি দেখেন আপনার শরীরের ডান বা বাম দিকের হাত-পা দুর্বল লাগছে বা নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে, অথবা মনে হচ্ছে অবশ হয়ে গেছে, তাহলে এটা স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে। এমনকি বিছানা থেকে উঠতে বা হাঁটতেও অসুবিধা হতে পারে।
  • কথা বলার সময় যদি মনে হয় মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না, অথবা কথা আটকে যাচ্ছে, বা অন্যরা আপনার কথা বুঝতে পারছে না, তাহলে এটিও স্ট্রোকের কারণে হতে পারে।
  • ঘুম থেকে উঠে আয়নায় দেখলে যদি মনে হয় আপনার মুখটা একদিকে হালকা বেঁকে গেছে, অথবা হাসতে গেলে মুখ স্বাভাবিক দেখাচ্ছে না, তাহলে এটি স্ট্রোকের লক্ষণ।
  • হঠাৎ করে যদি চোখে ঘোলা দেখেন বা সবকিছু ঝাপসা লাগে, অথবা একটা জিনিস দুটো দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে মস্তিষ্কের দেখার অংশে সমস্যা হয়েছে, যা স্ট্রোকের কারণে হতে পারে।
  • ঘুম থেকে উঠে যদি মনে হয় আপনি ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছেন না, শরীর টলছে বা মাথা ঘুরছে, তাহলে এটি মস্তিষ্কের ভারসাম্য রক্ষার অংশে সমস্যার লক্ষণ, যা স্ট্রোকের জন্য হতে পারে।
  • যদি এই লক্ষণগুলোর কোনো একটাও সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আপনার বা আপনার পরিচিত কারো মধ্যে দেখা যায়, তাহলে একদম দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন বা হাসপাতালে যান। স্ট্রোকের চিকিৎসায় সময় খুব জরুরি। তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করলে বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।

ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক হলে এর প্রতিরোধ ও করণীয়

প্রতিরোধ ও করণীয়

ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোর জন্য কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলা যায়। এগুলো মেনে চললে স্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে-

প্রথমত, স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা করান। স্লিপ অ্যাপনিয়া মানে ঘুমের সময় শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া। এতে শরীরে অক্সিজেনের অভাব হয়। অক্সিজেনের অভাব হলে রক্তচাপ বাড়ে এবং মস্তিষ্কের রক্তনালীর উপর চাপ পড়ে। এর ফলে ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই, ঘুমের সময় শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, নাক ডাকা বা সকালে মাথাব্যথা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তার CPAP মেশিন ব্যবহার করতে বা অন্য চিকিৎসা নিতে বলতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুমান। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠুন। এতে আপনার শরীরের ঘুমের ঘড়ি ঠিক থাকবে। বড়দের জন্য প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে বিশ্রাম দেয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অনিয়মিত ঘুম শরীরের হরমোন ও রক্তচাপের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই, একটা নির্দিষ্ট ঘুমের নিয়ম মেনে চলুন।

তৃতীয়ত, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন। স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য এটা খুব জরুরি। এর মধ্যে কয়েকটা জিনিস আছেঃ

  • ওজন কমানঃ বেশি ওজন বা মোটা হলে শরীরের উপর বেশি চাপ পড়ে। এতে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল বাড়ে, যা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। তাই, ভালো খাবার খান এবং ব্যায়াম করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • সুষম খাবার খানঃ ফল, সবজি, শস্য এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার খান। এগুলো রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ফাস্ট ফুড, বেশি লবণ ও চিনি দেওয়া খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রচুর পরিমাণে জল পান করাও ভালো।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করুন (যেমন দ্রুত হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানো)। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং রক্ত চলাচল ভালো হয়। ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
  • ধূমপান ও মদ্যপান ছাড়ুনঃ ধূমপান রক্তনালীকে ছোট ও শক্ত করে দেয় এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। বেশি মদ্যপান করলে রক্তচাপ বাড়ে এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই, এই অভ্যাসগুলো বাদ দেওয়া উচিত।

চতুর্থত, স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসা করানঃ যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরলের মতো সমস্যা থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান, ভালো খাবার খান এবং নিয়মিত পরীক্ষা করান। এই রোগগুলো মস্তিষ্কের রক্তনালীকে খারাপ করে দিতে পারে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখলে ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকের সম্ভাবনাও কমে যায়।

সর্বশেষ

ঘুমের সময় স্ট্রোকের বিপদ কমাতে কয়েকটা সহজ জিনিস মনে রাখলেই হবে। প্রথমত, যাদের ঘুমের মধ্যে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় (স্লিপ অ্যাপনিয়া), তাদের অবশ্যই ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত। এই রোগ হলে রক্তচাপ বাড়ে আর মস্তিষ্কের রক্তনালীতে চাপ পড়ে, যা ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। তাই, ঘুমের সময় শ্বাস বন্ধ মনে হলে বা জোরে নাক ডাকলে ডাক্তার দেখান।

দ্বিতীয়ত, সুস্থ থাকতে হলে রোজ একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া আর ঘুম থেকে ওঠা দরকার। বড়দের জন্য দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ঠিকমতো ঘুম না হলে শরীরের রক্তচাপ বিগড়ে যেতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এর সাথে সাথে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ভালো খাওয়া দাওয়া করা, রোজ হালকা ব্যায়াম করা এবং অবশ্যই ধূমপান ও মদ্যপান ছেড়ে দেওয়া উচিত। যদি প্রেসার, সুগার বা কোলেস্টেরল বেশি থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন। এই ছোট ছোট জিনিসগুলো মেনে চললে ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকের ভয় অনেকটাই কমে যায়।

 

আমাদের সাথে কথা বলতে বা যেকোনো পরামর্শ পেতে – 01760-636324 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ নিউরোফিট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *