ডিপ্রেশনের প্রাথমিক লক্ষণগুলো চেনা গেলে শুরুতেই সচেতন হওয়া যায় এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়। মন খারাপ লাগা বা দুঃখবোধ থাকা স্বাভাবিক, তবে কিছু লক্ষণ রয়েছে যা দীর্ঘস্থায়ী হলে বা তীব্র হলে উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এই লক্ষণগুলো দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলতে শুরু করলে দ্রুত মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আমাদের এই পোস্টে আমরা ডিপ্রেশনের প্রাথমিক লক্ষণ কি কি তা নিয়ে বিষদ আলোচনা করেছি।
বিষণ্নতার শুরুতে মন খারাপ থাকা, আগ্রহ হারিয়ে ফেলা এবং ক্লান্তি অনুভব করা খুব সাধারণ লক্ষণ। হয়তো আগে যে কাজগুলো করতে ভালো লাগত, এখন সেগুলো আর তেমন আকর্ষণ করে না। অনেকের মধ্যে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়, কেউ রাতে ঘুমাতে পারেন না, আবার কেউ দিনের বেলায়ও খুব বেশি ঘুমিয়ে থাকেন। খাবারে অরুচি বা অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগাও বিষণ্নতার একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। এর পাশাপাশি মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটা, কোনো কিছুতে মন বসাতে না পারা এবং নিজেদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হওয়াও শুরু হতে পারে।
শারীরিক কিছু পরিবর্তনও বিষণ্নতার প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা দিতে পারে। যেমন – মাথাব্যথা, পেটে অস্বস্তি, হজমের সমস্যা অথবা শরীরে কোনো কারণ ছাড়াই ব্যথা অনুভব করা। এই লক্ষণগুলো অনেক সময় অন্য শারীরিক অসুস্থতার মতো মনে হতে পারে, তাই অনেকেই প্রথমে গুরুত্ব দেন না। তবে যদি এই শারীরিক সমস্যাগুলোর পাশাপাশি মানসিক অবসাদ বা আগ্রহ হারানোর মতো অনুভূতি থাকে, তাহলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাথে কথা বলা জরুরি। দ্রুত লক্ষণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে বিষণ্নতা নিয়ন্ত্রণে আনা অনেক সহজ হয়।
ডিপ্রেশন কি, কেন হয় এবং এর চিকিৎসা নিয়ে এই পোস্টে আলোচনা করেছি।
মানসিক লক্ষণ
বিষণ্নতার শুরুতে মন খারাপ থাকা, আগ্রহ হারানো, নিজেদের মূল্যহীন মনে করা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশাবাদী হওয়া প্রধান মানসিক লক্ষণ।
দীর্ঘ সময় ধরে মন খারাপ, দুঃখ বা শূন্যতার অনুভূতি
একটানা মন খারাপ থাকা এই সমস্যার প্রধান একটি লক্ষণ। এটা সাধারণ দিনের মন খারাপের মতো নয়, যা হয়তো কোনো নির্দিষ্ট কারণে হয় এবং কিছুক্ষণ পর ঠিক হয়ে যায়। বিষণ্নতায় এই খারাপ লাগাটা দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ। কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই মনটা ভার হয়ে থাকে, ভেতরে একটা দুঃখ বা শূন্যতার অনুভূতি কাজ করে।
ধরুন, আগে আপনি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে খুব ভালোবাসতেন, সিনেমা দেখতে পছন্দ করতেন বা বই পড়তে ভালো লাগত। এখন সেই কাজগুলো করতে আর মন চাইছে না। এমনকি মজার কোনো ঘটনা ঘটলেও আপনার তেমন আনন্দ হচ্ছে না। সবসময় একটা মেঘলা আকাশ যেন মনের মধ্যে ছেয়ে আছে। কোনো কিছুতেই উৎসাহ পাচ্ছেন না এবং একটা খালি emptiness অনুভব করছেন, যা সহজে দূর হচ্ছে না। এটাই দীর্ঘ সময় ধরে মন খারাপ বা শূন্যতার অনুভূতি।
আগের পছন্দের কাজ ও শখে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
যখন বিষণ্নতা শুরু হয়, তখন আগে যে কাজগুলো আপনাকে আনন্দ দিত, যেগুলোর জন্য আপনি অপেক্ষা করতেন, সেগুলোর প্রতি আগ্রহ কমে যায়। শখের প্রতিও আর তেমন মনোযোগ থাকে না।
যেমন, কারো বাগান করার শখ থাকতে পারে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সে গাছের পরিচর্যা করত। কিন্তু বিষণ্নতা এলে সেই ব্যক্তি হয়তো আর বাগানে যেতেই চাইছে না, গাছের দিকেও তাকাচ্ছে না। অথবা এমন কেউ যিনি গান গাইতে বা শুনতে খুব ভালোবাসতেন, এখন তার আর গান শুনতে ভালো লাগছে না, এমনকি নিজের প্রিয় গানগুলোও বিরক্তিকর মনে হচ্ছে। পছন্দের সিনেমা দেখা বা বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছাও চলে যায়। কোনো কিছুই আর আগের মতো আনন্দ দেয় না।
নিজেকে মূল্যহীন, অপরাধী বা অসহায় মনে হওয়া
আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই নিজেদেরকে ছোট ও মূল্যহীন ভাবতে শুরু করেন। তারা মনে করেন তাদের কোনো গুরুত্ব নেই, তারা কারো কোনো কাজে আসে না। অনেক সময় তারা এমন সব কাজের জন্য নিজেদেরকে দায়ী করেন যা হয়তো তাদের নিয়ন্ত্রণেও ছিল না।
উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি হয়তো মনে করছেন তার কারণেই তার পরিবারের কোনো ক্ষতি হয়েছে, যদিও বাস্তবে তার কোনো দোষ ছিল না। অথবা তারা নিজেদেরকে এতটাই অপদার্থ ভাবতে শুরু করেন যে মনে করেন কোনো ভালো কিছুই তাদের প্রাপ্য নয়। সবকিছুতেই তারা নিজেদেরকে ব্যর্থ এবং অসহায় মনে করেন, মনে হয় যেন কোনো সমস্যা সমাধান করার বা কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষমতা তাদের নেই।
নেতিবাচক চিন্তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা
এক্ষেত্রে, মানুষের চিন্তাভাবনাগুলো নেতিবাচক হয়ে যায়। তারা সবসময় খারাপ কিছু ঘটার আশঙ্কা করেন এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কোনো আশার আলো দেখতে পান না। সবকিছু তাদের কাছে অন্ধকার ও হতাশাজনক মনে হয়।
যেমন, একজন ছাত্র হয়তো মনে করছে সে পরীক্ষায় কখনোই ভালো করতে পারবে না, যতই চেষ্টা করুক না কেন। একজন চাকরিজীবী হয়তো ভাবছেন তার কর্মজীবনে আর কোনো উন্নতি হবে না, সবকিছু একই রকম হতাশাজনক থাকবে। এমনকি সাধারণ দিনের ঘটনাগুলোকেও তারা নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন। তাদের মনে হতে পারে জীবনটা অর্থহীন এবং সামনে শুধুই কষ্ট অপেক্ষা করছে। এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তাগুলো তাদের আরও দুর্বল ও নিরাশ করে তোলে।
ব্রেইন স্ট্রোকের কারণ কি তা এই পোস্টের মাধ্যমে বিস্তারিত জানুন।
আচরণগত লক্ষণ
আচরণগত লক্ষণ হিসেবে বিষণ্নতার শুরুতে সামাজিকতা এড়িয়ে চলা, কাজ বা পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যাওয়া, অল্পতেই রেগে যাওয়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা যেতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো ব্যক্তির স্বাভাবিক কাজকর্ম ও সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে শুরু করে।
সামাজিকতা এড়িয়ে চলা, পরিবার-বন্ধুদের থেকে দূরে থাকা
শুরুতে আক্রান্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে সামাজিক কাজকর্ম থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করেন। আগে যেখানে বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করতে বা কথা বলতে ভালো লাগত, এখন সেই আগ্রহ আর থাকে না। তারা একা থাকতে বেশি পছন্দ করেন এবং অন্যদের সঙ্গ এড়িয়ে চলেন।
ধরুন, আগে আপনি প্রতি সপ্তাহান্তে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেতেন বা পরিবারের সাথে সময় কাটাতেন। বিষণ্নতা শুরু হলে আপনি ধীরে ধীরে সেইসব পরিকল্পনা বাতিল করতে শুরু করবেন। কারো ফোন ধরতে বা মেসেজের উত্তর দিতে ইচ্ছে করবে না। এমনকি কাছের বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাথেও কথা বলতে বা দেখা করতে ভালো লাগবে না। মনে হবে যেন সবার থেকে দূরে থাকলেই শান্তি।
কাজ বা পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যাওয়া, সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা
এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকেও প্রভাবিত করে। এর ফলে কাজ বা পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কোনো একটি বিষয়ে মন বসাতে বা দীর্ঘক্ষণ ধরে কাজ করতে সমস্যা হয়। একইসাথে, কোনো সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধা অনুভব হয়, এমনকি ছোটখাটো বিষয়েও সঠিক মনে করে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে যায়।
উদাহরণস্বরূপ, একজন কর্মজীবী হয়তো তার অফিসের কাজে ভুল করতে শুরু করছেন, মিটিংয়ে মনোযোগ দিতে পারছেন না অথবা নতুন কোনো প্রজেক্ট শুরু করতে সাহস পাচ্ছেন না। একজন ছাত্র হয়তো পড়ার টেবিলে বসলেও কিছুতেই মন বসাতে পারছে না, যা পড়ছে তা মনে থাকছে না অথবা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারছে না। এমনকি দিনের সাধারণ কাজগুলো, যেমন – কী খাবেন বা কখন ঘুমাবেন, সেই বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হতে পারে।
অল্পতেই রেগে যাওয়া বা খিটখিটে মেজাজ
এসময় শুধু মন খারাপ থাকে না, অনেক সময় মেজাজও খিটখিটে হয়ে যায়। সামান্য কারণেও বিরক্তি লাগতে পারে এবং অল্পতেই রাগারাগি করার প্রবণতা দেখা যায়। অন্যদের সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলা বা শান্ত থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
যেমন, হয়তো আগে আপনি খুব শান্ত স্বভাবের ছিলেন, কিন্তু এখন ছোট কোনো ভুল হলেই আপনি রেগে যাচ্ছেন বা চিৎকার করছেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে বা সহকর্মীদের সাথে সামান্য বিষয়েও তর্ক জুড়ে দিচ্ছেন। নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হচ্ছে এবং সহজেই ধৈর্য্য হারাচ্ছেন।
ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে জড়িয়ে পড়া (যেমন: দ্রুত গাড়ি চালানো, মাদক গ্রহণ)
কিছু ক্ষেত্রে, আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের ভেতরের কষ্ট বা হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে জড়িয়ে পড়তে পারেন। এর মধ্যে অতিরিক্ত দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো, মাদক দ্রব্য বা অ্যালকোহল গ্রহণ, অনিয়ন্ত্রিত খরচ করা বা অন্য কোনো বিপজ্জনক কাজ করা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি হয়তো আগে নিয়ম মেনে গাড়ি চালাতেন, কিন্তু এখন হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য খুব দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন এবং ট্র্যাফিকের নিয়ম ভাঙছেন। অথবা কেউ হয়তো মানসিক কষ্টের উপশম হিসেবে মাদক বা অ্যালকোহল নিতে শুরু করেছেন। এই ধরনের আচরণগুলো তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা মুক্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদীভাবে আরও বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
এই আচরণগত লক্ষণগুলো দেখা গেলে বোঝা যায় ব্যক্তি মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন এবং তার সাহায্য প্রয়োজন। তাই এই লক্ষণগুলো নজরে এলে দ্রুত একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
প্রেসার কত হলে স্ট্রোক হয় এই পোস্ট থেকে জানুন।
ডিপ্রেশনের প্রাথমিক লক্ষণ কি কি হিসেবে এর শারীরিক লক্ষণ
ঘুমের সমস্যা (অনিদ্রা বা অতিরিক্ত ঘুম)
একটি সাধারণ শারীরিক লক্ষণ হলো ঘুমের ধরনে পরিবর্তন আসা। অনেকের রাতে ঘুম আসতে সমস্যা হয়, যাকে অনিদ্রা বলা হয়। তারা হয়তো বিছানায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেগে থাকেন, বারবার ঘুম ভেঙে যায় অথবা খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায় এবং আর ঘুম আসে না।
অন্যদিকে, কিছু লোকের ক্ষেত্রে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। তারা দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুম অনুভব করেন এবং স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ঘুমাতে শুরু করেন। রাতেও দীর্ঘক্ষণ ঘুমানোর পরেও তাদের ক্লান্তি কাটে না এবং দিনের বেলাতেও ঝিমুনি ভাব থাকে। ঘুমের এই ধরনের অস্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হতে পারে।
ক্ষুধা ও ওজনের পরিবর্তন (হঠাৎ কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া)
এটি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় খাবারে অরুচি হয়ে যায়, কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না এবং এর ফলে তাদের ওজন অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যেতে শুরু করে। আগে যে খাবারগুলো তাদের প্রিয় ছিল, সেগুলোও আর তেমন আকর্ষণ করে না।
বিপরীতভাবে, কিছু লোক খারাপ লাগার সময় অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া শুরু করেন, বিশেষ করে চিনি বা ফ্যাটযুক্ত খাবার তাদের বেশি ভালো লাগে। মানসিক চাপ কমাতে তারা খাবারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন এবং এর ফলে তাদের ওজন দ্রুত বাড়তে শুরু করে। তাই হঠাৎ করে ক্ষুধা কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া এবং সেই সাথে ওজনের পরিবর্তন একটি লক্ষণ হতে পারে।
শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, হজমের সমস্যা
মানসিক কষ্টের প্রভাব শরীরের উপরও পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কষ্টের অভিযোগ করেন, যার কোনো স্পষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এর মধ্যে অন্যতম হলো শরীরে ব্যথা অনুভব করা, যা মাংসপেশী বা জয়েন্টে হতে পারে। এছাড়াও, মাথাব্যথা একটি খুব সাধারণ লক্ষণ।
হজমের সমস্যাও এর সাথে যুক্ত থাকতে পারে। অনেকের পেট খারাপ হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা অন্য ধরনের পেটের অস্বস্তি দেখা দেয়। এই শারীরিক লক্ষণগুলো অনেক সময় অন্য রোগের উপসর্গ মনে হতে পারে, কিন্তু যদি এর সাথে মানসিক অবসাদ বা আগ্রহ হারানোর মতো অনুভূতি থাকে, তাহলে তা এর কারণেও হতে পারে।
সব সময় ক্লান্তি ও শক্তির অভাব
আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায় সবসময় ক্লান্তি অনুভব করেন এবং তাদের শরীরে শক্তির অভাব বোধ হয়। সামান্য কাজ করতেও তাদের খুব বেশি পরিশ্রম মনে হয় এবং তারা দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এই ক্লান্তি বিশ্রাম নেওয়ার পরেও দূর হয় না।
তাদের মনে হতে পারে যেন শরীরের সমস্ত শক্তি নিংড়ে নেওয়া হয়েছে এবং কোনো কিছুই করার মতো উৎসাহ বা ক্ষমতা তাদের নেই। এমনকি সাধারণ দৈনন্দিন কাজগুলোও তাদের কাছে পাহাড়ের মতো মনে হতে পারে। এই দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক লক্ষণ।
এই শারীরিক লক্ষণগুলো অবহেলা করা উচিত নয়। যদি এই লক্ষণগুলোর পাশাপাশি মানসিক লক্ষণগুলোও দেখা যায়, তাহলে দ্রুত একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
স্ট্রোকের কারণে প্যারালাইসিস কিভাবে হয় জানেন? না হলে জেনে নিন।
চিন্তা ও অনুভূতির পরিবর্তন
মানসিক কষ্টের শুরুতে আমাদের চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। আগে হয়তো আপনি সহজেই সবকিছু মনে রাখতে পারতেন বা কোনো একটা বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারতেন, কিন্তু এখন হয়তো সেই ক্ষমতা কমে গেছে। ছোটখাটো জিনিসও ভুলে যাচ্ছেন অথবা কোনো একটা কাজে মন বসাতে পারছেন না। এছাড়াও, কোনো বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও কমে যেতে পারে। এমনকি খুব সাধারণ ব্যাপারেও কোনটা ঠিক বা ভুল তা বুঝতে অসুবিধা হতে পারে এবং আপনি দ্বিধায় ভুগতে পারেন। এই ধরনের পরিবর্তনগুলো দৈনন্দিন জীবনকে বেশ কঠিন করে তোলে।
সবচেয়ে গুরুতর পরিবর্তনগুলোর মধ্যে একটি হলো নিজের জীবন নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা আসা। কারো কারো মনে হতে পারে বেঁচে থাকার আর কোনো মানে নেই, অথবা তারা অন্যদের উপর বোঝা। এই ধরনের ভাবনা থেকেই আত্মহত্যার চিন্তা বা ইচ্ছা জন্ম নিতে পারে। এই অনুভূতিগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এর জন্য দ্রুত সাহায্য চাওয়া জরুরি। যদি আপনার বা আপনার পরিচিত কারো মধ্যে এই ধরনের চিন্তা আসে, তাহলে தயவு করে দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাথে যোগাযোগ করুন।
অন্যান্য লক্ষণ ও সার কথা
উপসংহারে বলা যায়, মানসিক কষ্টের প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। মানসিক, আচরণগত, শারীরিক এবং চিন্তা ও অনুভূতির ক্ষেত্রে আসা এই পরিবর্তনগুলো ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করতে শুরু করে। এর বাইরেও কিছু লক্ষণ রয়েছে যা হয়তো সবসময় স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে না। কেউ হয়তো নিজের ভেতরের কষ্ট বা অনুভূতি অন্যদের কাছে প্রকাশ করতে চান না, ভয় পান বা মনে করেন কেউ তাদের কথা বুঝবে না। তাই তারা নিজেদের অনুভূতিগুলো লুকিয়ে রাখেন।
আবার, অনেকে মানসিক কষ্টের মোকাবিলা করার ভুল উপায় হিসেবে নিজেদেরকে সবসময় কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত রাখেন। তারা অবসর বা অলস সময়কে এড়িয়ে যেতে চান, কারণ সেই সময়গুলোতে হয়তো তাদের ভেতরের চাপা কষ্টগুলো আরও বেশি করে অনুভব হতে পারে। এছাড়াও, এমন একটা অনুভূতিও কাজ করতে পারে যেখানে ব্যক্তি কোনো আবেগই স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারেন না। আনন্দ বা দুঃখ কোনো অনুভূতিই যেন আর আগের মতো তীব্রভাবে অনুভব হয় না, সবকিছু কেমন যেন ভোঁতা বা পানসে মনে হয়। এই লক্ষণগুলো হয়তো সরাসরি কষ্টের কারণের মতো না মনে হলেও, ভেতরের মানসিক struggle-এর ইঙ্গিত দেয়।
মনে রাখা জরুরি, এই লক্ষণগুলোর তীব্রতা এবং ধরন ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কারো মধ্যে হয়তো কয়েকটি লক্ষণ দেখা যায়, আবার কারো মধ্যে অনেকগুলো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যদি এই পরিবর্তনগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে, তাহলে কোনো দ্বিধা ছাড়াই একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাহায্য নেওয়া উচিত। দ্রুত শনাক্তকরণ এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে মানসিক কষ্টের প্রভাব কমানো এবং একটি সুস্থ জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব।
ডিপ্রেশন সংক্রান্ত যেকোনো পরামর্শ পেতে – 01760-636324 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ নিউরোফিট