ডিপ্রেশন কি?
ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা হলো মনের এমন একটি অবস্থা, যেখানে একজন মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে দুঃখবোধ, নিরাশা এবং কোনো কিছুতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এটা কেবল ক্ষণিকের খারাপ লাগা নয়, বরং এটি একটি মানসিক রোগ যা আমাদের আবেগ, চিন্তা এবং দৈনন্দিন কাজকর্মের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই মনে করেন যেন তাদের ভেতরের আনন্দ কোথাও হারিয়ে গেছে এবং তারা কোনো কিছুতেই আর উৎসাহ খুঁজে পান না। এই অনুভূতিগুলো দিনের পর দিন, এমনকি মাসের পর মাস ধরে চলতে থাকে এবং ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। আমরা আপনাদের এই পোস্টে ডিপ্রেশন কি এবং কেন হয় তা নিয়ে একটি বিস্তারিত ধারণা দিবো।
ডিপ্রেশন কেন হয় তার নির্দিষ্ট কোনো একটি কারণ নেই। এটি সাধারণত জিনগত, জৈবিক, পরিবেশগত এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলোর জটিল মিশ্রণের ফলে হতে পারে। মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা, বিশেষ করে সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং নরএপিনেফ্রিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের অভাব ডিপ্রেশনের একটি বড় কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও, বংশগত ইতিহাস, অর্থাৎ পরিবারের কারো আগে ডিপ্রেশন থাকলে অন্যদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। জীবনের কঠিন পরিস্থিতি, যেমন প্রিয়জনের মৃত্যু, চাকরি হারানো, আর্থিক সমস্যা বা সম্পর্কের অবনতিও ডিপ্রেশনকে ট্রিগার করতে পারে। শৈশবের traumatic অভিজ্ঞতা এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপও ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ডিপ্রেশন হলো মনের গভীর কষ্টের একটি অবস্থা যা অনেক কারণে হতে পারে। আমাদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকারিতা, আমাদের চারপাশের পরিবেশ এবং আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতা – এই সবকিছুই ডিপ্রেশনের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। এটি এমন একটি রোগ যা লুকিয়ে থাকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে ফেলে। তাই ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলো চিনতে পারা এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া খুবই জরুরি।
ব্রেইন স্ট্রোকের কারণ কি তা আমাদের এই পোস্ট থেকে জানতে পারবেন।
ডিপ্রেশন কেন হয়?
ডিপ্রেশন কেন হয়, তা একটি জটিল প্রশ্ন, কারণ এর পেছনে অনেকগুলো কারণ সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারে। কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণে ডিপ্রেশন হয় না, বরং জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক কারণগুলোর একটি জটিল interaction-এর ফলে এই মানসিক অবস্থা তৈরি হতে পারে। নিচে এই কারণগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
- মস্তিষ্কের রাসায়নিকের গড়মিলঃ আমাদের মাথায় কিছু রাসায়নিক থাকে, যা আমাদের ভালো লাগা, খারাপ লাগা আর চিন্তা করতে সাহায্য করে। সেরোটোনিন, ডোপামিন আর নরএপিনেফ্রিনের মতো কিছু রাসায়নিকের অভাব হলে ডিপ্রেশন হতে পারে। যাদের ডিপ্রেশন হয়, তাদের মাথায় এই রাসায়নিকগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। এর জন্য মন খারাপ লাগে, কোনো কিছুতে আর মন বসে না, আর ডিপ্রেশনের অন্য লক্ষণগুলো দেখা যায়।
- পরিবার বা সমাজের ঝামেলা, সম্পর্কের সমস্যাঃ আমাদের আশেপাশে যারা থাকে, তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন, তার ওপর আমাদের মন ভালো থাকা না থাকা অনেকখানি নির্ভর করে। পরিবারে ঝগড়াঝাঁটি, বন্ধুদের সাথে দূরত্ব, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা অথবা একা হয়ে গেলে ডিপ্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। যখন কেউ আমাদের ভালোবাসে না বা আমাদের পাশে থাকে না, তখন একা লাগে আর মন ভেঙে যায়। এই খারাপ লাগা থেকেই ডিপ্রেশন হতে পারে। সম্পর্কের সমস্যা আমাদের মনে অনেক চাপ সৃষ্টি করে আর আমাদের আবেগগুলোকে এলোমেলো করে দেয়।
- জীবনে বড় আঘাতঃ জীবনে হঠাৎ করে খারাপ কিছু ঘটলে, যেমন কাছের কেউ মারা গেলে, চাকরি চলে গেলে, অনেক টাকা ক্ষতি হলে, বড় কোনো অসুখ হলে বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের মনে খুব কষ্ট হয়। এই ধরনের ধাক্কা অনেক সময় ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি কেউ সেই কষ্টের সাথে মোকাবিলা করার জন্য ঠিকমতো সাহায্য না পায়, তাহলে ডিপ্রেশন হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- শারীরিক রোগ বা পুরনো ব্যথাঃ আমাদের শরীর আর মন একে অপরের সাথে খুব ভালোভাবে जुड़ा। যদি কারো দীর্ঘদিন ধরে কোনো শারীরিক রোগ থাকে, যেমন ক্যান্সার, হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস অথবা অনেক দিন ধরে কোনো ব্যথা থাকে, তাহলে তার ডিপ্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শারীরিক কষ্টের সাথে সাথে রোগের জন্য জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আসে আর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা হয়। এই কারণে মনে অনেক চাপ সৃষ্টি হয়, যা ডিপ্রেশন ডেকে আনতে পারে।
- অনেক বেশি মানসিক চাপ আর চিন্তাঃ आजकलকার জীবনে টেনশন একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে, কিন্তু যখন এই চাপ অনেক দিন ধরে থাকে আর আমরা সেটা সামলাতে না পারি, তখন সেটা ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে। অফিসে বেশি কাজ, পড়াশোনার চিন্তা, টাকার অভাব অথবা অন্য কোনো দুশ্চিন্তা আমাদের মন আর শরীরকে দুর্বল করে দেয়। এর ফলে ডিপ্রেশন হতে পারে।
- নেশা করা বা বেশি মদ খাওয়াঃ নেশার জিনিস আর মদ আমাদের মস্তিষ্কের কাজ করার ধরন পাল্টে দেয়। প্রথমে একটু ভালো লাগলেও, এগুলো বেশি ব্যবহার করলে মনের জন্য খুব খারাপ। এগুলো আমাদের মস্তিষ্কের রাসায়নিকের হিসাব গোলমাল করে দেয় এবং ডিপ্রেশন, চিন্তা আর অন্য মানসিক রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অনেকে দুঃখ ভুলতে বা খারাপ লাগা কমাতে নেশা করে, কিন্তু তাতে ডিপ্রেশন আরও বেড়ে যায়।
- বংশগত কারণ (পরিবারে ডিপ্রেশন থাকা): ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে আমাদের জিনও একটা ভূমিকা রাখে। যদি আমাদের পরিবারের কারো, যেমন বাবা, মা, ভাই, বোন বা অন্য কোনো কাছের আত্মীয়ের ডিপ্রেশন থেকে থাকে, তাহলে আমাদেরও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশি থাকে। কারণ আমাদের শরীরে কিছু জিন থাকে যা আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করবে আর তাতে কী কী রাসায়নিক থাকবে, তার উপর প্রভাব ফেলে। এই কারণে যাদের পরিবারে ডিপ্রেশনের ইতিহাস আছে, তারা অন্যদের তুলনায় ডিপ্রেশনের প্রতি একটু বেশি সংবেদনশীল হতে পারে। তবে এর মানে এই নয় যে তাদের ডিপ্রেশন হবেই, এটা শুধু একটা ঝুঁকির কারণ।
পরিশেষে এটাই বলা যায় যে, ডিপ্রেশন একটি জটিল মানসিক অবস্থা এবং এর মূলে বিভিন্ন কারণের সম্মিলিত প্রভাব থাকতে পারে। এই কারণগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, যা তাদের জীবনযাত্রা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং শারীরিক গঠন বা জৈবিক বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভরশীল। ডিপ্রেশনের কারণগুলো সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারলে, এর প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অনেক সহজ হয়।
স্ট্রোক রোগীর বিশেষ জরুরি চিকিৎসা এই পোস্টটির মাধ্যমে জানুন।
ডিপ্রেশনের লক্ষণ
ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলো বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ভিন্নভাবে দেখা দিতে পারে এবং এর তীব্রতাও কমবেশি হতে পারে। তবে সাধারণভাবে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু সুস্পষ্ট লক্ষণ প্রায়ই দেখা যায়। নিচে এই লক্ষণগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
অবশ্যই, এই লক্ষণগুলো আরও সহজ ভাষায় বিস্তারিতভাবে লেখা হলো:
- সবসময় মন খারাপ বা ভেতরে ফাঁকা লাগাঃ ডিপ্রেশনে থাকলে মনটা সব সময় খারাপ থাকে, যেন কোনো আনন্দই নেই। এই খারাপ লাগাটা হঠাৎ আসে না আর সহজেও যায় না। যাদের ডিপ্রেশন হয়, তাদের মনে হয় যেন ভেতরে একটা বিরাট শূন্যতা, কিছুই নেই। এই অনুভূতিটা এত খারাপ হতে পারে যে, প্রতিদিনের সাধারণ কাজগুলোও করতে কষ্ট হয়। অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই মন খারাপ লাগে আর কোনো কিছুতেই আর মজা পাওয়া যায় না।
- আগে যা ভালো লাগত, এখন আর লাগে নাঃ ডিপ্রেশনে যারা ভোগে, তারা আগে যেসব কাজ করতে বা যা যা শখ ছিল, সেগুলো থেকেও ধীরে ধীরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বন্ধুদের সাথে গল্প করা, সিনেমা দেখা, খেলাধুলা করা বা পছন্দের অন্য কিছুও আর ভালো লাগে না। কোনো কিছুতেই আর উৎসাহ বা আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় না, মনে হয় যেন সবকিছুই পানসে আর অর্থহীন। এটা ডিপ্রেশনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক, কারণ এর ফলে মানুষ একা হয়ে যায় এবং তাদের ব্যক্তিগত ভালো লাগার জিনিসগুলোও হারিয়ে ফেলে।
- শরীর আর মন ক্লান্ত লাগা, জোর না পাওয়াঃ ডিপ্রেশনে শরীর আর মন দুটোই খুব ক্লান্ত লাগে। একটু কাজ করতেও মনে হয় যেন অনেক শক্তি খরচ হচ্ছে আর সব সময় একটা দুর্বলতা লাগে। ভালোভাবে ঘুমানোর পরেও ক্লান্তি কাটে না। এই লক্ষণটা রোজকার কাজকর্মের ক্ষতি করে আর কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। অনেক সময় ছোটখাটো কাজও মনে হয় যেন অনেক কঠিন।
- ঘুমের সমস্যা (ঘুম না আসা বা বেশি ঘুমানো); ডিপ্রেশনে ঘুমের স্বাভাবিক নিয়মে গণ্ডগোল হতে পারে। কারো রাতে ঘুম আসতে চায় না (যাকে অনিদ্রা বলে), আবার কেউ কেউ দিনের বেলাতেও অনেক বেশি ঘুমায়। ঘুমটা তেমন গভীর হয় না, তাই সকালে ঘুম থেকে উঠলেও শরীর ও মন সতেজ লাগে না। ঘুমের এই সমস্যাগুলো ডিপ্রেশনের অন্য খারাপ দিকগুলোকেও আরও বাড়িয়ে দিতে পারে এবং শরীর ও মন দুটোকেই আরও দুর্বল করে দেয়।
- খাওয়ায় পরিবর্তন ও ওজন কমা-বাড়াঃ ডিপ্রেশনে যারা ভোগে, তাদের খাওয়ার অভ্যাসে বদল আসে। কারো একদম খিদে পায় না, ফলে ওজন কমে যায়। আবার কারো খুব বেশি খিদে পায় আর তারা বেশি খেতে শুরু করে, তাই ওজন বেড়ে যায়। এই পরিবর্তনগুলো শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে এবং ডিপ্রেশনের কষ্টের সাথে মিশে পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে।
- মনোযোগ দিতে না পারা, সিদ্ধান্ত নিতে কষ্ট হওয়াঃ ডিপ্রেশন আমাদের চিন্তাভাবনার উপরও প্রভাব ফেলে। যাদের ডিপ্রেশন হয়, তারা কোনো একটা বিষয়ে মন বসাতে বা কোনো কিছু ঠিক করতে সমস্যায় পড়ে। সবকিছু যেন ঘোলাটে লাগে আর কোনো কিছুতেই মন স্থির করা যায় না। ছোটখাটো ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে ভয় লাগে আর মনে হয় যেন ভুল হয়ে যাবে। এর ফলে পড়াশোনা, কাজ আর রোজকার জীবনে অনেক অসুবিধা হয়।
- নিজের সম্মান কমে যাওয়া আর মনে হওয়া যে কোনো দাম নেইঃ ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেদেরকে অন্যদের থেকে ছোট আর মূল্যহীন মনে করে। নিজের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ হয় আর মনে হয় যেন তারা কোনো কাজের না। একটু ভুল হলেই বা কোনো কাজে সফল না হলেই নিজেদেরকে খুব বেশি দোষ দেয় আর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। এই খারাপ চিন্তাগুলো ডিপ্রেশনের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেয়।
- আত্মহত্যার চিন্তা বা চেষ্টাঃ ডিপ্রেশনের সবচেয়ে খারাপ লক্ষণ হলো নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার চিন্তা আসা বা সেই চেষ্টা করা। যখন মনের কষ্ট সহ্য করা যায় না আর জীবনে কোনো মানে খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন কিছু মানুষ মনে করে যে মরে গেলেই সব দুঃখ শেষ হয়ে যাবে। এই ধরনের চিন্তা বা চেষ্টা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া খুব জরুরি।
যদি আপনার বা আপনার পরিচিত কারো মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাহায্য নেওয়া উচিত। ডিপ্রেশন একটি নিরাময়যোগ্য রোগ এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব।
ধূমপানের কারণে কিভাবে আপনি স্ট্রোকের শিকার হতে পারেন জেনে নিন।
ডিপ্রেশনের চিকিৎসা
ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা
ডিপ্রেশনের চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ওষুধের ব্যবহার। আমাদের মস্তিষ্কে কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যাদেরকে নিউরোট্রান্সমিটার বলা হয়। এই নিউরোট্রান্সমিটারগুলো আমাদের মেজাজ, আবেগ এবং অন্যান্য মানসিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং নরএপিনেফ্রিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যহীনতা ডিপ্রেশনের একটি বড় কারণ হিসেবে মনে করা হয়।
ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হলো মস্তিষ্কের এই রাসায়নিক ভারসাম্যকে ফিরিয়ে আনা বা স্বাভাবিক করা। ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় সাধারণত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট (antidepressant) ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলো মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা বাড়াতে বা তাদের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। যেমন, সেরোটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটরস (SSRIs) নামক ওষুধগুলো মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। সেরোটোনিন আমাদের ভালো লাগা এবং খুশির অনুভূতির সাথে জড়িত। একইভাবে, অন্যান্য অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটারের উপর কাজ করে মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।
এটা মনে রাখা খুব জরুরি যে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধগুলো তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে না। ওষুধ খাওয়া শুরু করার পরে এর প্রভাব দেখতে সাধারণত কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। প্রথম কয়েক সপ্তাহে হয়তো তেমন কোনো পরিবর্তন চোখে নাও পড়তে পারে। তাই ধৈর্য ধরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ চালিয়ে যাওয়া উচিত। নিজের ইচ্ছামতো ওষুধ বন্ধ করা বা ডোজ পরিবর্তন করা উচিত নয়, কারণ এতে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
চিকিৎসক রোগীর লক্ষণ এবং শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে সঠিক ওষুধ এবং তার ডোজ নির্ধারণ করেন। একেক রোগীর জন্য একেক ধরনের ওষুধ বা ডোজ প্রয়োজন হতে পারে। তাই ডাক্তারের সাথে খোলামেলা আলোচনা করা এবং তিনি যা বলেন তা মনোযোগ দিয়ে শোনা ও মেনে চলা খুব জরুরি। ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে, যদিও সেগুলো সাধারণত হালকা হয় এবং সময়ের সাথে সাথে কমে যায়। যদি কোনো গুরুতর বা অস্বস্তিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তবে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসককে জানাতে হবে।
ডিপ্রেশনের ওষুধ একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার, তবে এটি প্রায়শই অন্যান্য চিকিৎসার সাথে ব্যবহার করা হয়, যেমন সাইকোথেরাপি বা মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ। ওষুধ মস্তিষ্কের জৈবিক দিকটির খেয়াল রাখে, আর থেরাপি মানসিক ও আবেগিক দিক থেকে সাহায্য করে। এই দুটো পদ্ধতি একসাথে ব্যবহার করলে ডিপ্রেশন থেকে দ্রুত এবং ভালোভাবে সুস্থ হওয়া সম্ভব।
এই পোস্ট থেকে স্ট্রোকের কারণে প্যারালাইসিস কিভাবে হয় বিস্তারিত জানুন।
সাইকোথেরাপি (কথা চিকিৎসা)
ডিপ্রেশনের চিকিৎসার আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সাইকোথেরাপি, যাকে আমরা সাধারণভাবে ‘কথা চিকিৎসা’ বলে থাকি। এই পদ্ধতিতে, ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তি একজন প্রশিক্ষিত থেরাপিস্ট বা মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাথে কথা বলেন। থেরাপিস্ট রোগীর মানসিক অবস্থা ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করেন এবং তার সমস্যার মূল কারণগুলো খুঁজে বের করতে সাহায্য করেন। শুধু তাই নয়, এই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের বিভিন্ন উপায়ও খুঁজে বের করা হয়।
কথা চিকিৎসার মূল ভিত্তি হলো রোগীর সাথে একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং সহায়ক সম্পর্ক তৈরি করা। থেরাপিস্ট মনোযোগ দিয়ে রোগীর কথা শোনেন, তার অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করেন এবং কোনো রকম বিচার না করে তাকে সমর্থন দেন। এই বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে রোগী তার ভেতরের জমে থাকা কষ্ট, ভয় বা উদ্বেগের কথা খুলে বলতে পারেন। অনেক সময়, নিজের ভেতরের কথা কাউকে বলতে পারলেই মানসিক চাপ অনেকটা কমে যায়।
বিভিন্ন ধরনের সাইকোথেরাপি পদ্ধতি রয়েছে, তবে ডিপ্রেশনের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর একটি পদ্ধতি হলো জ্ঞানভিত্তিক আচরণ থেরাপি (Cognitive Behavioral Therapy বা CBT)। এই থেরাপি রোগীর নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং আচরণের ধরণগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই নিজেদের সম্পর্কে, জগৎ সম্পর্কে এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা পোষণ করেন, যা তাদের মন খারাপের কারণ হয়। CBT-এর মাধ্যমে থেরাপিস্ট রোগীকে এই ভুল ধারণাগুলো চ্যালেঞ্জ করতে এবং আরও বাস্তবসম্মত ও ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে শেখান।
CBT শুধু চিন্তাভাবনার পরিবর্তন নয়, আচরণের পরিবর্তনের উপরও জোর দেয়। থেরাপিস্ট রোগীকে এমন কিছু কাজ করতে উৎসাহিত করেন যা তাদের মন ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং ধীরে ধীরে তাদের নিষ্ক্রিয়তা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। এর মধ্যে ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করা, সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা বা পছন্দের কাজগুলো পুনরায় শুরু করার মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
সাইকোথেরাপি একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া এবং এর সুফল পেতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। থেরাপিস্টের সাথে নিয়মিত অ্যাপয়েন্টমেন্টে অংশ নেওয়া এবং তিনি যা বলেন তা আন্তরিকভাবে মেনে চলা জরুরি। অনেক সময় ওষুধ চিকিৎসার পাশাপাশি সাইকোথেরাপি গ্রহণ করলে ডিপ্রেশন থেকে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ ওষুধ মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্য ঠিক করতে সাহায্য করে, আর থেরাপি মানসিক ও আবেগিক দিক থেকে রোগীকে শক্তিশালী করে তোলে।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও ঘরোয়া পদ্ধতি
ডিপ্রেশন মোকাবিলায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনা এবং কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করা খুবই সহায়ক হতে পারে। এগুলো হয়তো ওষুধের মতো সরাসরি কাজ করে না, তবে আমাদের মন ও শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলো কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- নিয়মিত ব্যায়াম আর দৌড়াদৌড়িঃ শরীরটাকে একটু নাড়াচাড়া করলে মনটাও ভালো থাকে। রোজ একটু হাঁটলে, দৌড়ালে বা পছন্দের কোনো খেলাধুলা করলে আমাদের মাথায় এমন কিছু জিনিস তৈরি হয় যা মনকে খুশি রাখে আর দুশ্চিন্তা কমায়।
- ভালো আর পুষ্টিকর খাবার খাওয়াঃ ভালো খাবার খেলে শরীর যেমন শক্তি পায়, মনটাও ভালো থাকে। ফল, সবজি, ডাল, ডিম, মাছ – এইগুলো খেলে ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে। ফাস্ট ফুড বা বেশি মিষ্টি জিনিস না খাওয়াই ভালো। আর হ্যাঁ, জলও বেশি করে খাওয়া দরকার।
- ঠিকঠাক ঘুমানোঃ ঘুম আমাদের শরীর আর মনকে আরাম দেয়। রোজ ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমালে মন শান্ত থাকে আর ডিপ্রেশনের খারাপ লাগাগুলো কমে। চেষ্টা করতে হবে রোজ একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া আর ঘুম থেকে ওঠার। ঘুমের আগে ফোন বা টিভি না দেখাই ভালো।
- টেনশন কমানোর জন্য চুপ করে বসা বা শরীর হালকা করাঃ জীবনে অনেক চিন্তা থাকে, যা ডিপ্রেশন আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। একটু সময় বের করে চুপচাপ বসলে বা লম্বা শ্বাস নিলে মন শান্ত হয়। পছন্দের গান শুনলেও আরাম লাগে।
- বন্ধুদের সাথে কথা বলা আর ভালো চিন্তা করাঃ বন্ধু আর পরিবারের সাথে গল্প করলে মন হালকা হয় আর একা লাগে না। খারাপ চিন্তাগুলো বাদ দিয়ে ভালো কিছু ভাবলে ডিপ্রেশন মোকাবেলা করা সহজ হয়। নিজের জন্য ছোটখাটো কিছু ভালো কাজ করলে খুশি লাগে আর মন ভালো থাকে।
গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় এখনই জেনে নিন।
অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি
ডিপ্রেশনের চিকিৎসার জন্য ওষুধ আর কথা বলার থেরাপি ছাড়াও আরও কিছু পদ্ধতি আছে, যা কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে কাজে লাগে। নিচে সেগুলো সহজ করে বলা হলো:
আলোর চিকিৎসা (লাইট থেরাপি)
শীতের আগমন মানেই চারদিকে কুয়াশার চাদর, আর দিনের আলোর স্থায়িত্ব কমে যাওয়া। এই সময়ে কিছু মানুষ এক বিশেষ ধরনের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে পারে, যা শীতকালীন বিষণ্নতা বা সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (SAD) নামে পরিচিত। স্যাড-এ আক্রান্ত ব্যক্তিরা মনমরা ভাব, অতিরিক্ত ঘুমের প্রবণতা, শরীরে ক্লান্তি এবং দৈনন্দিন কাজে আগ্রহের অভাব অনুভব করেন। এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় আলোর চিকিৎসা বা লাইট থেরাপি একটি কার্যকর উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই থেরাপিতে একটি বিশেষ লাইট বক্স ব্যবহার করা হয়, যা থেকে নির্গত আলো দিনের স্বাভাবিক আলোর মতোই উজ্জ্বল, তবে এতে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি অনুপস্থিত থাকে।
এই সমস্যার সমাধানে আলোর চিকিৎসা বা লাইট থেরাপি একটি কার্যকরী পদ্ধতি। এই চিকিৎসায় একটি বিশেষ ধরনের লাইট বক্স ব্যবহার করা হয়। এই লাইট বক্স থেকে যে আলো বের হয়, তা দেখতে অনেকটা দিনের আলোর মতোই, তবে এতে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থাকে না। রোগীকে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে (সাধারণত ২০ থেকে ৩০ মিনিট) এই লাইট বক্সের সামনে বসতে বলা হয়। বসার সময় সরাসরি আলোর দিকে তাকাতে হয় না, বরং এমনভাবে বসতে হয় যাতে আলো চোখের রেটিনায় পৌঁছায়।
রোগীকে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে (সাধারণত ২০ থেকে ৩০ মিনিট) এই লাইট বক্সের সামনে বসতে বলা হয়। বসার সময় সরাসরি আলোর দিকে তাকাতে হয় না, বরং এমনভাবে বসতে হয় যাতে আলো চোখের রেটিনায় পৌঁছায়।
হাসপাতালে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা
যখন ডিপ্রেশন খুব বেশি বেড়ে যায় বা রোগীর এমন অবস্থা হয় যে বাড়িতে চিকিৎসা করা কঠিন, তখন হাসপাতালে ভর্তি করে বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার হতে পারে। হাসপাতালে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সার্বক্ষণিক রোগীর উপর নজর রাখেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা দেন। এখানে বিভিন্ন ধরনের থেরাপি, ওষুধ এবং অন্যান্য সাহায্য দেওয়া হয়, যা রোগীকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যাদের আত্মহত্যার চিন্তা আসে বা যারা নিজেদের বা অন্যের ক্ষতি করতে পারে, তাদের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়াটা খুব জরুরি। হাসপাতালে একটি নিরাপদ এবং সহায়ক পরিবেশে রোগীর মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো সম্ভব হয়।
আপনি হয়তো জানেন না যে কম বয়সেও স্ট্রোক হয়। কেন হয় তা আজই জেনে নিন।
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য পরামর্শ
ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা হলো একটি মানসিক অবস্থা যা আমাদের আবেগ, চিন্তা এবং আচরণের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি কেবল খারাপ লাগা বা মন খারাপের চেয়ে অনেক বেশি গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই দুঃখ, হতাশা, আগ্রহের অভাব এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে মনোযোগের অভাব অনুভব করেন। শারীরিক লক্ষণ যেমন ক্লান্তি, ঘুমের সমস্যা এবং ক্ষুধা মন্দাও দেখা দিতে পারে।
ডিপ্রেশন কেন হয় তার নির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে মনে করা হয় এটি জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং পরিবেশগত কারণগুলোর জটিল সংমিশ্রণের ফল। মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা, জিনগত প্রবণতা, জীবনের কঠিন অভিজ্ঞতা (যেমন প্রিয়জনের মৃত্যু, সম্পর্ক বিচ্ছেদ, আর্থিক সমস্যা), দীর্ঘস্থায়ী চাপ এবং কিছু শারীরিক অসুস্থতা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ডিপ্রেশনের চিকিৎসা সম্ভব এবং এক্ষেত্রে সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা সাধারণত ওষুধ, সাইকোথেরাপি (যেমন কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি বা আন্তঃব্যক্তিক থেরাপি), অথবা উভয়ের সমন্বয়ে গঠিত হয়। পরিবার ও বন্ধুদের সমর্থন এবং নিজের প্রতি যত্ন নেওয়াও চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মনে রাখবেন, ডিপ্রেশন কোনো দুর্বলতা নয় এবং সাহায্য চাওয়া সাহসের পরিচয়। যদি আপনার বা আপনার পরিচিত কারো মধ্যে ডিপ্রেশনের লক্ষণ দেখা যায়, তবে দেরি না করে একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
ডিপ্রেশন সংক্রান্ত যেকোনো পরামর্শ পেতে – 01760-636324 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ নিউরোফিট