স্ট্রোক মানে হলো আমাদের মাথার ভেতরের মগজে রক্ত যাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া। এতে মগজের কোষগুলো অক্সিজেন আর খাবার পায় না, তাই তাড়াতাড়ি নষ্ট হতে শুরু করে। যদি সময় মতো ধরা যায় আর চিকিৎসা শুরু করা যায়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায় আর মানুষকে বাঁচানোও যায়। স্ট্রোকের লক্ষণ কখন আসবে বলা যায় না, কিন্তু স্ট্রোক হয়েছে কিনা বুঝবেন কিভাবে, সেটা তাড়াতাড়ি চিনতে পারলে অনেক উপকার।
আমাদের সবারই স্ট্রোকের লক্ষণগুলো মনে রাখা উচিত আর জানা উচিত কী করতে হবে। কারণ যে কারোরই স্ট্রোক হতে পারে। যদি আমরা লক্ষণগুলো চিনি আর সাথে সাথে কিছু করি, তাহলে আমরা অনেকের জীবন বাঁচাতে পারবো। তাই স্ট্রোকের প্রথম দিকের লক্ষণগুলো কী আর সেগুলো দেখলে কী করতে হবে, তা আমাদের অবশ্যই জানতে হবে।
এরপর আমরা স্ট্রোকের কিছু জরুরি লক্ষণ আর সেগুলো সহজে চেনার উপায় নিয়ে কথা বলবো। এর সাথে, স্ট্রোকের লক্ষণ দেখলে কিভাবে খুব তাড়াতাড়ি আর ভালোভাবে সাহায্য করা যায়, সেই বিষয়েও জানবো। এইগুলো জানলে আমরা সবাই মিলে স্ট্রোকের বিপদ কমাতে পারবো আর অসুস্থ মানুষকে বাঁচাতে পারবো।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে আপনার কি কি করণীয় তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ: F.A.S.T. পদ্ধতি
স্ট্রোক চেনার জন্য F.A.S.T. পদ্ধতি খুবই কার্যকর:
- F (Face Drooping): স্ট্রোকের সময় মুখের এক পাশ ঝুলে পড়তে পারে বা অসাড় মনে হতে পারে। এটি পরীক্ষা করার জন্য রোগীকে হাসতে বলুন। যদি দেখা যায় যে মুখের একটি পাশ নড়াচড়া করছে না বা ঝুলে পড়েছে, তবে এটি স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে।
- A (Arm Weakness): স্ট্রোকের কারণে শরীরের এক পাশ দুর্বল বা অসাড় হয়ে যেতে পারে। এটি পরীক্ষা করার জন্য রোগীকে উভয় হাত তুলতে বলুন। যদি একটি হাত স্বাভাবিকভাবে উপরে থাকতে না পারে এবং নিচে নেমে যায়, তবে এটি সতর্ক সংকেত।
- S (Speech Difficulty): স্ট্রোকের কারণে কথা বলার ক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীকে একটি সহজ বাক্য বলতে বলুন। যদি তারা স্পষ্টভাবে কথা বলতে না পারে অথবা তাদের কথা জড়িয়ে যায়, তবে এটি স্ট্রোকের একটি লক্ষণ হতে পারে।
- T (Time to Call): উপরোক্ত কোনো লক্ষণ দেখা গেলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিন। যত দ্রুত সম্ভব অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন এবং রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততই মস্তিষ্কের ক্ষতি কমানো সম্ভব। F.A.S.T. পদ্ধতি অনুসরণ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া রোগীর জীবন রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।
অন্যান্য লক্ষণ | স্ট্রোক হয়েছে কিনা বুঝবেন কিভাবে?
F.A.S.T. ছাড়াও কিছু অতিরিক্ত লক্ষণ রয়েছে যা স্ট্রোক নির্দেশ করতে পারে:
- হঠাৎ দুর্বল বা অসাড়: হঠাৎ করে শরীরের একপাশ (যেমন ডান হাত ও পা) দুর্বল লাগতে পারে বা মনে হতে পারে যেন অবশ হয়ে গেছে। মুখও বেঁকে যেতে পারে।
- কথা বলতে সমস্যা: হঠাৎ কথা আটকে যেতে পারে বা অন্য কারো কথা বুঝতে অসুবিধা হতে পারে।
- চোখে দেখতে সমস্যা: হঠাৎ এক বা দুই চোখে ঝাপসা দেখা বা একেবারেই না দেখার মতো সমস্যা হতে পারে।
- ভারসাম্যহীনতা: হঠাৎ মনে হতে পারে যেন আপনি টলমল করছেন, মাথা ঘুরছে বা হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে।
- তীব্র মাথাব্যথা: হঠাৎ করে খুব severe (ভয়ঙ্কর) মাথাব্যথা শুরু হতে পারে, যার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
যেসব পদক্ষেপ আমাদের দ্রুত নিতে হবে
স্ট্রোক হলে প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন:
১. দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন: স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা গেলে কোনোভাবেই নিজে হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। দ্রুত 199 নম্বরে (সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস) অথবা আপনার পরিচিত কোনো বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবার নম্বরে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন। দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানো এবং চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি।
২. সময় মনে রাখুন: স্ট্রোকের লক্ষণগুলো ঠিক কখন শুরু হয়েছে, সেই সময়টা অবশ্যই মনে রাখার চেষ্টা করুন এবং অ্যাম্বুলেন্সের কর্মীদের বা হাসপাতালে পৌঁছানোর পর ডাক্তারকে জানান। এই তথ্যটি চিকিৎসকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কিছু বিশেষ চিকিৎসা (যেমন থ্রম্বোলাইসিস) একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শুরু করতে হয়।
৩. রোগীকে শান্ত রাখুন: রোগীকে স্থিরভাবে শুইয়ে দিন। তাদের আশেপাশে ভিড় কমিয়ে শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন। রোগীকে আশ্বস্ত করুন এবং তাদের সাথে শান্তভাবে কথা বলুন। তাদের নড়াচড়া করতে বা কোনো রকম চেষ্টা করতে উৎসাহিত করবেন না।
সতর্কতা
মাঝে মাঝে এমন হতে পারে যে হঠাৎ করে আপনার হাত বা পা দুর্বল লাগছে, অবশ লাগছে, কথা বলতে বা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে, চোখে ঝাপসা দেখছেন অথবা শরীরের ব্যালেন্স রাখতে পারছেন না। এই লক্ষণগুলো কয়েক মিনিটের জন্য এসে আবার চলেও যেতে পারে। একে ছোটখাটো স্ট্রোক (মিনি স্ট্রোক) বলা হয়।
অনেকেই ভাবেন যেহেতু লক্ষণগুলো অল্প সময়ের জন্য ছিল এবং এখন ভালো লাগছে, তাই আর চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু এটা একদমই ভুল ধারণা। ছোটখাটো স্ট্রোক আসলে একটা বড় ধরনের স্ট্রোকের আগের সংকেত। এর মানে হলো আপনার মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে অল্প সময়ের জন্য সমস্যা হয়েছিল এবং ভবিষ্যতে বড় ধরনের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই, এই ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে একদম দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান এবং পরীক্ষা করান। তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করলে বড় ধরনের স্ট্রোকের হাত থেকে বাঁচা যেতে পারে।
স্ট্রোক সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। F.A.S.T. পদ্ধতি মনে রাখুন এবং প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিন।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ নিউরোফিট